নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান অভিযানের অংশ হিসেবে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০ জনের বেশি মাদক বিক্রেতা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এতে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার দিবাগত রাতেও ছয় জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে আটজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ তারা সবাই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
এর মধ্যে যশোরে মাদকের সঙ্গে জড়িত তিনজন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া রাজশাহীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন, নরসিংদীতে একজন, ঝিনাইদহে একজন, টাঙ্গাইলে একজন এবং চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন মারা যায়।
গতকাল র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মাদকের সঙ্গে জড়িতরা ফিরে না এলে তাদের শেকড়-বাকড়সহ উপড়ে ফেলা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গতকাল একটি অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
যশোরে ‘গোলাগুলিতে’ তিন ‘মাদক বিক্রেতা’ নিহত
যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছেন। লাশগুলো হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে রোববার গভীর রাতে তারা নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের পরিচয় না জানায় পরিবারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে ১৭ মে রাত থেকে (প্রথম রমজান) থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত সারাদেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
পুলিশের ভাষ্যে, নিহতদের বেশিরভাগই নিজ এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সেবনকারী। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি একেএম আজমল হুদা জানান, রোববার দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুটি স্থানে তিনজন নিহত হয়েছেন।
পরে পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওসি জানান, রাতে যশোর শহরতলীর শেখহাটি ও খোলাডাঙ্গায় মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করছে- এমন সংবাদ পায় পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ ওই স্থান দুটিতে যায়।
এ সময় শেখহাটির নওয়াব আলীর খেজুর বাগান নামক স্থান থেকে দুটি গুলিবিদ্ধ লাশ এবং ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে খোলাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে থেকে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ ও ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল ও গুলির খোসা পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
রাজশাহীতে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১
রাজশাহীতে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। র্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এএম আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, নিহত ব্যক্তির নাম লিয়াকত আলী বলে তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। তার বাড়ি পুঠিয়ায়। লিয়াকত পুঠিয়ার একজন শীর্ষ মাদক বিক্রেতা ছিলেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, তারা থানায় খোঁজ নিয়ে জেনেছেন- লিয়াকতের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড তাজা গুলি ও একটি গুলি খোসা জব্দ করা হয়েছে।
মেজর আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাতে পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে মাদক বিক্রেতারা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষায় র্যাবও তখন পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থলে লিয়াকত আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ সময় লিয়াকতকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মরদেহ রামেকের মর্গে রাখা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ নবগঙ্গা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল হাসান ওরফে হাসান ঘাটিয়াল নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। পবা উপজেলার সোনাইকান্দী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদকের ১৬টি মামলা ছিল।
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক বিক্রেতা নিহত
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জনাব আলী (৩২) নামে এক চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে।
রবিবার দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে উপজেলার উথলী গ্রামের সন্যাসীতলা মাঠের মধ্যে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শর্টগান, দু’টি কার্তুজ, তিনটি রামদা এবং এক বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। বন্দুকযুদ্ধের সময় জীবননগর থানার তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
নিহত জনাব আলী উথলী গ্রামের আমতলা পাড়ার জামাত আলীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, নিয়মিত টহল হিসেবে রবিবার রাতে উপজেলার উথলী মোল্যাবাড়ি-সন্যাসীতলা সড়কে টহল দিচ্ছিলো জীবননগর থানা পুলিশ। এসময় পুলিশের গাড়ি সন্যাসীতলা নামক মাঠের কাছে পৌঁছালে ১০/১২ জনের দুর্বৃত্তদল পুলিশকে লক্ষ্য করে ৫/৭ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এক পর্যায়ে পুলিশও আত্মরক্ষার্থে দুর্বৃত্তদলকে লক্ষ করে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ১০/১২ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে দুর্বৃত্তদলের সদস্যরা পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে গ্রামবাসী এসে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মৃত যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা উথলী গ্রামের জনাব আলীর লাশ বলে শনাক্ত করেন।
এসময় জীবননগর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিলন হোসেন, কনস্টেবল ওয়ালিদ রহমান এবং কনেস্টবল জুয়েল হোসেন আহত হন।
নরসিংদীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ‘মাদক বিক্রেতা’ নিহত
নরসিংদী জেলার পলাশে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। তার নাম ইমান আলী। এই ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি সংস্থাটির।
র্যাব-১১-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত ব্যক্তি নরসিংদীর শীর্ষ মাদক বিক্রেতা। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১১টি মামলা আছে। তিনি পলাতক ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে জানায় র্যাব।
ঝিনাইদহে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সব্দুল মন্ডল (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। সব্দুল নরেন্দ্রপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এএসপি গোলাম মোর্শেদ জানান, রবিবার দিনগত রাত ১.৩০টার দিকে র্যাব-৬ এর একটি টহল দল নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে চেকপোস্ট বসায়। এ সময় র্যাব সদস্যরা একটি মোটর সাইকেলকে থামার সংকেত দিলে তারা না থেমে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের ধাওয়া দিলে মাদক বিক্রেতারা র্যাবকে লক্ষ্য করে পুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে সব্দুল মন্ডল নিহত হন। বাকিরা পালিয়ে যান।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাদক বিক্রেতা সব্দুল মন্ডলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ‘মাদক বিক্রেতা’ নিহত
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ি এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। এসময় দুই র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ১০০ পিস ফেনসিডিল ও পনেরশ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে টাঙ্গাইল র্যাব-১২।
নিহত মাদক বিক্রেতার বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ি এলাকা।
টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রবিউল ইসলাম জানান, রবিবার দিনগত রাতে ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ি এলাকার একটি ইটভাটায় একদল মাদক বিক্রেতা মাদকদ্রব্য বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে বলে খবর আসে র্যাবের কাছে। এর ভিত্তিতে অভিযান চালালে মাদক বিক্রেতা চক্রের সদস্যরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এলোপাথারি গুলি চালায়। পরে র্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে একজন মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় দুই র্যাব সদস্য আহত হন।
পরে ওই মাদক বিক্রেতাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ