২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৫৮

শামিম মিয়ার কর্মচারী থেকে গার্মেন্ট মালিক হওয়ার গল্প!

মোঃ গোলাম আযম সরকার , রংপুরঃ

ব্যবসা করতে সামান্য মূলধন লাগে , প্রয়োজন স্বপ্ন ও সাহস। যখন ব্যবসা শুরু করি তখন সাহস, সততা আর পরিশ্রম করার মানসিকতার পাশা-পাশি ছিল সামান্যই মূলধনই আমার,’ বলছিলেন রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পীরগাছা সদর ইউনিয়নের তালুক ঈসাদ (কালিতলা) এলাকার মোঃ শামিম মিয়া।
তার পিতার নাম মোঃ মজিবর রহমান ,মাতার নাম মোছাঃ চাম্পা বেগম। তিনি এক সময়ে গার্মেন্টসে কাজ করতেন। অভাবে জর্জরিত ছিল তার পরিবার। একই সঙ্গে দুঃখ ছিল বাবার জমা-জমি না থাকার কারনে। তিন ভাই এক বোন কে নিয়ে যখন শামিমের পিতা চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার পিতা। পিতার বড় সন্তান হওয়ার কারনে এক সময়ে শামিম চিন্তা করলেন পিতা,যেহেতু গরিব , তাই তিনি অন্য মানুষের মত ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরিতে যোগদান করেন। ২০০১ খ্রিঃ দাখিল পাশ করলেন, ভর্তি হলেন একই উপজেলার পীরগাছা ডিগ্রী কলেজে মানবিক বিভাগে, মাস ৬ ক্লাস করার পরে দারিদ্রতার কারনে লেখা পড়া তার আর করা হয় নি। চলে গেলেন ঢাকায় ঢুকলেন নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ এলাকার নিউ ঢাকা নামের একটি স্পিনিং মিলে হেলপার পোষ্টে। যোগদান করেন মাসিক ১৬০০ টাকা বেতনে। মনুষের পরামর্শে সেই খান থেকে জুম সোয়েটার কোম্পানী তে কাজ শেখার পরে সেলারি প্রডাকশনে যোগদান করেন । মাস ৬ এর মধ্যে কর্মদক্ষতার কারনে প্রমোশন পান স্যাম্পলম্যান হিসেবে যোগদান করার এক বছরের মাথায় প্রমোশন পান সুপারভাইজার হিসেবে সেখানে দুই বছর চাকুরির করার পরে কোম্পানী পরিবর্তন করে এ্যারাউন্ড ষ্টার সোয়েটার কোম্পানীতে কিউসি পদে, সেখানে একবছর চাকুরির করার মাথায় প্রমোশন পেয়ে যান ফ্যাক্টোরী কিউসি পদে। ১ বছর চাকুরির করার পরে,কোম্পানী পরিবর্তন করে, এস এস সোয়েটার কোম্পানীর ফ্যাক্টেরি ম্যানেজার সেই হিসেবে যোগদান করেন। এক বছর পরে সেখান থেকে চলে যান নরসিংদি জেলার রান সোয়েটাওে কোম্পানীতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকে মা সোয়েটার কোম্পাণীতে ১০% পার্টনার হিসেবে যোগদান করেন ২০১৫। এরপর নিজে নিজেই গার্মেন্ট তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি , যেমন স্বপ্ন দেখা তেমনি তার বাস্তব রুপ দিলেন তিনি, ২০১৭ সালে মাঝামাঝি সময়ে নিজ বাড়িতে তৈরি করলেন এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন । বর্তমানে ১৪ জন কর্মচারী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুরতেই মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ৩টি মেশিন দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও ব্যবসার মুনাফা থেকে বর্তমানে ১৬ টি মেশিনে যাবতিয় সোয়েটার, টি-শাট,শাট তৈরি হচ্ছে দিনে ১৫০-২০০ পিস ।
নবীনদেরকে তিনি বলেন , সামান্য মুলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেই আমাদের রংপুর অঞ্চল হয়ে উঠতে পাড়ে একসময় শিল্প এলাকা। আমি সবাইকে বলবো আসুন একটি করে গার্মেন্ট তৈরি করি এবং আমাদের এ অঞ্চলকে করি অথ নৈতিক অঞ্চল হিসেবে। ছোট পরিসরে বাড়ির মধ্যেই গার্মেন্ট তৈরি করেছেন শামিম মিয়া। তার গার্মেন্টে এর প্রসার দিন দিন বাড়ছে। বাড়ির পাশে জমি ক্রয় করে নিজের ৪ শতাংশ জমির উপর ‘এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন’ নামে কারখানা তৈরি করেছেন। শামিমের যাবতিয় সোয়েটার, টি-শাট এবং শাট তৈরি করে সাপ্লাই দেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মান ভালো হওয়ায় এলাকায় বেশ সমাদৃত ‘এস.টি নিট উলেস ফ্যাসন’ ।ঢাকা, রংপুর,গাইবান্ধা এবং লালমনিরহাটে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য যায়। বর্তমানে শামিম নিজেই এটি পরিচালনা করছেন । সরকার যদি আর্থিক সহযোগিতা করতেন তার প্রতিষ্টান উত্ত্বরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে এলাকার তরুণ বেকার হ্রাস পেত।

দৈনিক দেশজন /এন এইচ

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৮ ৮:৫০ অপরাহ্ণ