১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫৩

এসিড মামলার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের উপর ক্ষেপেছেন এসআই বাদল

কাজী শাহ্ আলম,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুসদ মদাতী গ্রামের গৃহবূধ সাহিদা বেগমের উপর এসিড নিক্ষেপ মামলার অবস্থা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় ওই গৃহবধু ও সাংবাদিকের উপর ক্ষেপে উঠেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) বাদল কুমার মন্ডল।

এ ছাড়া পুলিশের ওই কর্মকর্তা বাদল কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে আসামী গ্রেফতারের অজুহাতে গৃহবূধ সাহিদা বেগমের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা গ্রহনের অভিযোগও উঠেছে। গত ৪ এপ্রিল একাধিক পত্রিকায় “এডিস মামলা আসামী আবু হানিফাকে ৪ মাসেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো আসামী পরিবারের লোকজন বাদীর পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে”। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ হলে পুরো বিষয়টি নিয়ে নড়েচরে বসে পুলিশ বিভাগ।

এ নিয়ে গত ৮ এপ্রিল পুলিশের রংপুর রেঞ্জ’র ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে পুরো বিষয়টি অধিকরন তদন্ত, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ বর্তমান জানতে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হককে একটি পত্র দিয়েছেন। গত ৯ এপ্রিল লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক এ পত্রে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে গত সোমবার ওই গৃহবধু সাহিদা বেগমের বাড়ি তদন্তে যায় কালীগঞ্জ থানার ওসি মকবুল হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক বাদল কুমার মন্ডল। এ সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় পুলিশের ওই কর্মকর্তা বাদল কুমার মন্ডল গৃহবধু সাহিদা বেগমের উপর রেগে যায়। এ পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সাহিদা বেগমকে বলেন, বলো কত টাকা সাংবাদিককে দিয়েছো ? সাংবাদিক টাকা ছাড়া নিউজ করে না। এ সময় গৃহবধু সাহিদা বেগম ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাংবাদিক নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদও করেন।

এ দিকে গত মঙ্গলবার লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী পুরো বিষয়টি তদন্ত, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ বর্তমান অবস্থা জানতে গৃহবুধ সাহিদা বেগমসহ তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

গৃহবুধ সাহিদা বেগম বলেন, আসামীরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। আসামী গ্রেফতার বাবদ বিভিন্ন সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক বাদল কুমার মন্ডল আমার কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আসামী গ্রেফতার করছে না। তা ছাড়া দুই জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ পত্র (চার্জসিট) থেকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাদল কুমার মন্ডল। সাংবাদিকদের নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেছেন। আমি পুরো বিষয়টি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে অবগত করেছি।
তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) বাদল কুমার মন্ডল তার বিরুদ্ধে টাকা গ্রহন, সাংবাদিক সর্ম্পকে খারাপ মন্তব্য ও আসামী গ্রেফতার না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসামী ধরতে নিয়মিত চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে আর নিউজ না করতে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাও তদন্ত করা হবে।

মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারী রাতে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুসদ মদাতী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী সাহিদা বেগম কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এসিড নিক্ষেপ করেন প্রতিবেশী জমসের আলীর পুত্র আবু হানিফা। ওই এসিড নিক্ষেপে সাহিদা বেগমের মুখ, গলা ও বুক ঝলসে যায়। এ সময় স্থানীয়রা এসিডদগ্ধ সাহিদা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ব্র্যাক এসিডদগ্ধ সাহিদা বেগমকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। ওই ঘটনায় সাহিদা বেগমের ভাই শহিনুর রহমান বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৬, তারিখ ঃ ১৯/০১/২০১৮ইং। কিন্তু ঘটনার ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামীকে গ্রেফতার বা ওই মামলার অভিযোগ পত্র (চার্জশীট) দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ঘটনার পর থেকে আসামী আবু হানিফের পরিবারের লোকজন বাদীর পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

প্রকাশ :মে ১৮, ২০১৮ ৯:৪২ অপরাহ্ণ