নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ারটি ফাঁকা রেখেই এতিমদের নিয়ে ঢাকার লেডিস ক্লাবে ইফতার করলেন বিএনপি নেতারা। প্রতিবছর ইস্কাটনের এই ক্লাবেই মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের পাশে বসিয়ে ইফতার করতেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
আজ শুক্রবার প্রথম রোজায় সেই আয়োজন করে বিএনপি, সব কিছু হয় আগের মতোই। তবে দলীয় চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতি মঞ্চে এতিমদের পাশে তার আসন শূন্য রাখা হয়।
এদিকে কারাগারে খালেদা জিয়া কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার দিয়েই ইফতার সেরেছেন। তার ইফতারে খেজুর, পেঁয়াজু, ছোলা-মুড়ি ও শরবতের পাশাপাশি কিছু ফল ছিল বলে একাধিক কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড়ের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও তার সঙ্গে আছেন।
বিকালে নেত্রীর জন্য ইফতার নিয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে কয়েকজন কারাগারের ফটকে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ইফতার গ্রহণের সুযোগ না নেই বলে তাদের জানিয়ে দেন কারা কর্মকর্তারা।
এদিকে শুক্রবার কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েও না মেলায় খালেদা জিয়ার স্বজনরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে বিএনপি নেত্রীর একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন।
ইফতার মাহফিলে দলের পক্ষ থেকে এতিম শিক্ষার্থীসহ ওলামা-মাশায়েখদের স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইফতার শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আজকে অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা এই ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠান করছি। প্রতিবছর পহেলা রমজানে এই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা, যিনি ১৬ কোটি মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে আমাদের মাঝে নেই। এই সময়ে তিনি কারাগারে।
“প্রত্যেক বছর তিনি (খালেদা জিয়া) এখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ইফতার করেন। আজকে তিনি কারাগারের অন্ধকারে একেবারে নির্জনে প্রথম রমজানের ইফতার করছেন। এটা আমাদের সকলের জন্যে অত্যন্ত মর্মান্তিক।”
দ্রুত মুক্ত হয়ে তাদের নেত্রী যেন আবার সবার মাঝে ফিরে আসতে পারেন সেই দোয়া করতে উপস্থিতদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ একটি ‘ক্রান্তিকাল’ পার করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সাহস নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ‘গণতন্ত্র ও দেশনেত্রীর মুক্তি ছিনিয়ে’ আনতে হবে।
‘“এই জগদ্দল যে পাথর আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে, ফ্যাসিবাদ এক নায়ক চেপে বসেছে, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে।”
লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আপনাদের সামনে তার কথা বলার কথা ছিল। তবে উনি জুমার নামাজে থাকায় কথা বলতে পারলেন না। তিনি আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, রমজানুল মোবারক জানিয়েছেন।
“তিনি তার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।”
ইফতারে দলের মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের জন্য বিএনপি আয়োজিত ইফতারে ফার্মগেইটের মদিনাতুল উলুম বালক বালিকা কামিল মাদ্রাসা, শান্তিনগর মাদ্রাসা ও গোপীবাগ মাদ্রাসার দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়।
ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে ইফতারে ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মাওলানা সাইয়িদ কামাল উদ্দিন জাফরী, রাজধানীর সোহবানবাগ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মিরপুর জামেয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা আবু তাহের জেহাদী, কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসা-ই নুরীয়ার মোহাদ্দিস মুফতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজা।
ইফতার শুরুর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থতা, তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য এবং দেশের অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর