আজ থেকে শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, বরকত আর নাযাতের মহান বাণী নিয়ে সিয়াম সাধনার এই মাস আমাদের দ্বারে আবারো উপস্থিত। সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ সংযম। পবিত্র রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীগণ পানাহারসহ সব রকমের ইন্দ্রিয় তৃপ্তিদায়ক কাজ থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করে থাকেন।
আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে মাহে রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের নৈকট্য লাভের বিরাট সুযোগ এনে দেয় এ পবিত্র মাস। পবিত্র এ মাসে রয়েছে হাজার রজনীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর। এ রাতে মহানবী (সাঃ) এর ওপর নাজেল হয়েছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন।
সংযম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও সব রকম লোভ লালসা থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণের মাস মাহে রমজান। এ মাস গোনাহ্ মাফের মাস। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, অথচ গোনাহ মাফ করাতে পারল না, তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। বস্তুতঃ বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা ইহলৌকিক শান্তি ও পরলৌকিক মুক্তি অর্জন করতে পারি।
কিন্ত পরিতাপের বিষয় হলো-এ পবিত্র মাসেও সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নেয়। রোজাদারদের কষ্টের কথা বিবেচনা না করে তারা আত্মস্বার্থ হাসিলে তৎপর থাকে। প্রতিবারের মতো এবারও রমজান আসার আগেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের চাবুকের আঘাতে বর্তমান বাংলাদেশের জনজীবন ক্ষত-বিক্ষত, তার ওপর রমজান মাসকে সামনে রেখে জিনিস পত্রের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিবেচিত। সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় রমজান মাসে প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও সে নির্দেশনা কেউ-ই মানছে না। এ অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না।
পাশাপাশি প্রচন্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং, পানি ও গ্যাস সংকট রোজার মাসে নগরবাসীর জন্য বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টির করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকার কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে, তবে তা কতোটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই।
রমজানের আরেকটি শিক্ষা দরিদ্র অসহায়দের প্রতি সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেয়া। দেশের বিত্তবানরা যদি তাদের হাত দরিদ্রদের দিকে প্রসারিত করেন। তাহলে তারাও রমজানের এ মাসে কিছুটা স্বস্তিতে সিয়াম সাধনায় ব্রতী হতে পারবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাহে রমজান ভোগ-বিলাস লোভ-লালসা পরিহার করে আত্মসংযমী হতে আমাদেরকে প্রেরণা যোগায়। সে প্রেরণার উদ্বুদ্ধ হয়ে রমজানের শিক্ষাকে প্রাত্যাহিক জীবনে প্রতিফলিত করে পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত হওয়ার চেষ্টায় আত্মনিমগ্ন হওয়া প্রতিটি মুসলমানদের কর্তব্য।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশ ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। খোশ আমদেদ মাহে রমজান।