আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সফর শেষ করে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ নিয়ে পরিষদে প্রথম বৈঠক হলো সোমবার। সংবাদ সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, বৈঠকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হেলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে কিছু সদস্য দেশের জন্য মিয়ানমারের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
নিকি হেলিকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টারস জানাচ্ছে, “কাউন্সিলের (নিরাপত্তা) কিছু সদস্যের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য কিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা।”
“এমনকি সাম্প্রতিক সফরের সময় কোনো কোনো প্রতিনিধি কাউন্সিলের ঐক্য নষ্ট করেছেন, কাউন্সিল যে বার্তা মিয়ানমারকে দিতে চেয়েছিল, তা দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।”
রয়টারস জানাচ্ছে, সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করলেও মার্কিন দূত যে চীনেরই সমালোচনা করেছেন তা স্পষ্ট ছিল। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে থেকে ব্রিটেন যে বিবৃতির খসড়া প্রস্তাব করেছিল, চীনের চাপে তাতে অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, ব্রিটেনের তৈরি প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলা হয়েছিল, যেটা চাপের কারণে বাদ দিতে হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটি বিবৃতিতে শেষ পর্যন্ত ঐক্যমত্য হয়।
মার্কিন দূত নিকি হেলিকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, “রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা জরুরী হয়ে পড়েছে। সমাধানে মিয়ানমার যাতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়, তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা আমাদের কাছে রয়েছে।”
এএফপি বলছে, মুখে না বললেও, নিকি হেলি মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
জানা গেছে জাতিসংঘে চীনের দূত মা ঝাওশু মার্কিন দূতের সমালোচনার জবাবে বলেন – পরিস্থিতি আরো জটিল না করে, নিরাপত্তা পরিষদের উচিৎ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে দ্বিপাক্ষিক-ভাবে সমস্যার সমাধান উৎসাহিত করা।
কূটনীতিকদের সূত্রে সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আলোচনায় রাশিয়াও চীনের সমর্থনে কথা বলেছে।
এ মাসের গোঁড়ার দিকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের মিয়ানমার সফরের সময় জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বিবিসিকে বলেছিলেন – সফরকারী কূটনীতিকরা মিস সুচি এবং মিয়ানমারের সেনা প্রধানকে ‘স্পষ্ট করে বলেছেন’ রাখাইনে নির্যাতন, হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টরসের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ এবং হত্যার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সেনা-কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচার হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য- চীন ও রাশিয়ার অবস্থানের কারণে সে পথে এগুনো কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ