আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে চলমান বিক্ষোভে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হলেও তাতে দমে যায়নি তারা। মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করেছে।
আজ ১৫ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির ৭০তম বার্ষিকী। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র। এ দিনটিকে ‘নাকবা’ বা ‘মহাবিপর্যয়’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধনের দিন সোমবার ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা একথা জানিয়ে বলেছেন, ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর একদিনে ফিলিস্তিনি নিহতের এ সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার প্রতিবাদে গাজা উপত্যকাসহ পুরো ফিলিস্তিনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এদিন জেরুজালেমে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা এ পদক্ষেপকে জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলি শাসনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট সমর্থন হিসাবে দেখছে। জেরুজালেমের পূর্বাঞ্চলকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। জেরুজালেমে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং ইসরায়েলি নেতাদের উপস্থিতিতে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী ঘোষণায় ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেইডম্যান বলেন, ‘আজ আমরা ইসরায়েলের জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খুলছি।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল একটি সার্বভৌম জাতি। তাদের নিজেদের রাজধানী নির্ধারণের অধিকার আছে। কিন্তু বহুদিন ধরে আমরা সুষ্পষ্ট এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দিনটিকে ইসরায়েলের জন্য ‘গৌরবজ্জ্বল দিন’ বলে উল্লেখ করেন। জেরুজালেমকে নিজেদের ‘শাশ্বত ও অখণ্ড’রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েল।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের ৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের দিনেই সোমবার মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধন করা হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জারেড কুশনার ইসরায়েলে যান । এ দুজনই হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মিউচিন ও উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট ভবনের ভেতরই ছোট আকারে দূতাবাসের কাজ চলবে।পরে তেলআবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস পুরোপুরি উঠে গেলে তখন বড় কোনো স্থানে দূতাবাস ভবন করা হবে।
এর আগে গত বছর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এদিকে ইসরায়েল ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও ফিলিস্তিনিরা মার্কিন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এর বিরোধিতা করে আসছে। ফিলিস্তিনিরা কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় বিক্ষোভ করে আসলেও জেরুজালেমে দূতাবাস উদ্বোধনের দিন নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর ওই দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘বিপর্যয়’ বা ‘নাকাবা’ দিবস হিসেবে পালন করে। ওই বছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়। ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ বা নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার অধিকারের দাবিতে গত ৩০ মার্চ থেকে ফিলিস্তিনিরা গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
আর মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের দিন সোমবার সকাল থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সুরক্ষিত সীমানা বেস্টনি পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এদিন ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি ১৩ টি স্থানে বিক্ষোভে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা ওই সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ও পেট্রোলবোমা ছোড়ে।
এ সময় ইসরায়েলী বাহিনী গুলি, টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় গাজা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের উপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়। তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও হেবরনেও বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা।
এদিকে একসঙ্গে এতো ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর। গাজাযর ঘটনাকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে বর্ণনা করেন তিনি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি