ভোলা প্রতিনিধি :
ভোলা শহরে প্রাণ কেন্দ্র দরগাহ রোডের পশ্চিম পাশের হোমিও কলেজে রোডের উত্তর পূর্ব পাশের একর সম্পত্তি রয়েছে। যা সম্পূর্ণ জলাশয়। জমিটি বাংলাদেশ ওয়াক্ফ স্টেটের দেখভাল করেন মোওয়াল্লী ও বড় জামে মসজিদ কমিটি। এ জলাশয়টি ভোলা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি কমিটির কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বালি দিয়ে ভরাট করে চিড়াই কাঠের মার্কেট নির্মাণ করবে। বালি দিয়ে ভরাট এবং দোকান নির্মাণের কাজ চলছে। কাঠ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে স-মিলও নির্মাণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে এখানে। অত্র এলাকার ২শাতাধিক পরিবার এই জলাশয়ের চর্তুপাশের বসবাস করছে। ড্রেনেজে ব্যবস্থা না থাকায় ওই ২শ’ পরিবারের ব্যবহৃত পানি এই জলাশয় দিয়ে খালে চলে যায়। এমনকি বৃষ্টিরও এই জলাশয় দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু জলাশয়টি বালি দিয়ে পুরোপুরি ভরাট করলে হোমিও কলেজ রোডের উপরে ১ ফুট পানি সবসময় জমা থাকবে।
কারণ বাসা-বাড়ী এবং বৃষ্টির পানি কোন জায়গা দিয়ে বের হওয়ার জায়গা থাকবে না। তাহলে কোন স্থান দিয়ে পানি নিস্কাসন হবে ? এদিকে দরগাহ রোডের নতুন ড্রেনে জলাশয়ের বালি এসে ড্রেনগুলো ভরে যাবে, তখন পুরো দরগাহ ও হোমিও কলেজ রোডের মানুষগুলো পানিতে হাবু-ডুবু খাবে। ভোলা পৌর সভার মেয়র মহোদয়ের আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভেস্তে যাবে। এলাকাবাসী এবং কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন এখন মুখোমুখি অবস্থান করছে। যে কোন সময়ে বড় ধরনের অ-ঘটন ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন নির্বিকার থাকায় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হোমিও কলেজ রোডের স্থানীয় বয়েজেষ্ঠ্য বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অত্র এলাকায় হোমিও কলেজ, অধ্যয়ন প্রি-ক্যাডেট, উদয়ন শিশু কানন, নলিনী দাস স্কুল, কারিমীয়া মাদ্রাসা, আদর্শ একাডেমী, মিঝি বাড়ী মাদ্রাসাসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে মার্কেট হলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই বেশি ক্ষতি হবে। এই এলাকায় চুরি, ছিনতাই, গাঁজা, ইয়াবা ও হিরোইনের সেবক ছিল। এখানে মার্কেট হলে ওদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। আমাদের সন্তানদের ধরে রাখতে পারবো না। স্থানিয় সুমন বলেন, মার্কেট হবে শুনে আমার অনেক ভাড়াটিয়া চলে গেছে। বলা যায় পুরো বিল্ডিং খালি। মার্কেট নির্মাণ হলে আমি এবং এখানকার অনেক বাসিন্দাও অন্যত্র চলে যাবে। এ সম্পত্তির মোতওয়াল্লী মোঃ আরিফ বলেন, ভাই আমি ডিসি অফিসে চাকুরী করি। সারাদিন ব্যস্ত থাকি। শুনেছি কমিটির কাছ থেকে কাঠ ব্যবসায়ীরা ওই স্থানটি ভাড়া নিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না।
কাঠ মালিক ব্যবসায়ী সমতিরি সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ভুইয়া বলেন, আমাদের আগের মার্কেটটি ছেড়ে দিয়ে কমিটির কাছ থেকে এই জমিটি ভাড়া নিয়েছি। আমরা কোথাও কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করিনি, এখানেও করবো না। জলাশয় ভরাট ও আবাসিক এলাকায় মার্কেট নির্মাণ করার আইনগত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। বড় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি কিংবা সম্পাদককে পাওয়া না যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পরিবেশবাদী আন্দোলন (বাপা)’র নেতা মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী বলেন, জলাশয় ভরাট তো দূরের কথা, আবাসিক এলাকায় কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ার নিয়ম নেই।
ভোলা পৌর সভার নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন আরজু বলেন ওই স্থানে দোকান নির্মাণ করছে এমন খবর শুনেছি, তবে আমাদের কাছ থেকে কেউ অনুমতি নেয়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ