২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৫৬

গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানি শুরু হচ্ছে আগামী মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামী ১১ই জুন থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ৯ই মে কমিশন এক বৈঠক শেষে এই শুনানির দিন ঘোষণা করে। কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্যাসের ট্রান্সমিশন চার্জ, ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ এবং ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দামের ওপর এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের দাম বাড়াতে ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর প্রস্তাবের ওপর ১১ই জুন শুনানি হয়ে শুরু হয়ে চলবে ২১শে জুন পযস্ত। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর অডিটরিয়ামে সকাল ১০টায় এই শুনানি শুরু হবে। বিইআরসি জানিয়েছে, প্রথমদিন ১১ই জুন গণশুনানি হবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর।

এরপর পর্যায়ক্রমে ১৩ই জুন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের, ১৪ই জুন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের, ১৮ই জুন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের, ১৯ই জুন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের, ২০শে জুন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের এবং  ২১শে জুন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের।

আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আগামী ৩১শে মের মধ্যে কমিশনে নাম তালিকাভুক্তিসহ শুনানি-পূর্ব লিখিত বক্তব্য/ মতামত কমিশনে প্রেরণ করতে পারবেন। উপরে উল্লিখিত তারিখসমূহে অনুষ্ঠেয় গণশুনানিতে অংশগ্রহণপূর্বক গ্যাসের ট্রান্সমিশন চার্জ, ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ এবং ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের আবেদনের বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী যুক্তি অথবা মতামত উপস্থাপন করতে পারবেন।

প্রঙ্গসত, এ দফায় বাসাবাড়িকে বাদ দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। বিইআরসি কাছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয় গত ২০শে মার্চ। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবাসিক ছাড়া অন্য সব খাতেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে আবাসিক গ্রাহকের আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই।

এলএনজি আমদানি আরো বাড়লে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দামও বাড়বে। নতুন প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ, সার কারখানা, শিল্প, ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সিএনজিতে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার শিল্পে ১৬ টাকা, বিদ্যুতে ১০ টাকা,  সারে ১২ টাকা ৮০ পয়সা, সিএনজিতে ৪০ টাকা থেকে ৪৮, ক্যাপটিভে ১৬ টাকা এবং চা শিল্পে ১২ টাকা ৮০ পয়সা নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমান বলেন, তারা গ্যাসে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দিয়েছে ২০শে মার্চ।

তিনি আরো জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রস্তাব তৈরি করেছেন তারা। এখন বিইআরসিই সিদ্ধান্ত নেবে কত টাকা দাম বাড়াবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বাসাবাড়ির জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। বিইআরসি দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিলেও উচ্চ আদালতের রায়ে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড়মূল্য সাত টাকা ৩৫ পয়সা।

গতবার সরাসরি দুই চুলার দাম ৬০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছিল বিতরণ কোম্পানি। তখন কমিশন তা ৯৫০ টাকা  নির্ধারণ করে দেয়। যদিও কমিশনের আদেশের পর উচ্চ আদালত দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এখনো ৮০০ টাকাই রয়েছে দুই চুলার গ্যাসের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি আসার পর গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে, তা পর্যায়ক্রমে সমন্বয়ের জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে ইতিমধ্যে এলএনজি গ্যাসে পৌঁছে গেছে। ২৫শে মে পর থেকে জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হবে।

দেশি গ্যাসের চেয়ে এলএনজির দাম বেশি বলে লোকসান কমাতে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, কোম্পানিগুলো একই হারে দাম বাড়ানোর অভিন্ন প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এতে গড়ে ৭০ থেকে ৪০০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির জন্য বিইআরসি গণশুনানির দিন নির্ধারণ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় দাম বাড়ানো কিংবা সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এবার ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাস-তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে একটু দ্বিধায় রয়েছে সরকার।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ১২, ২০১৮ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ