আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালেও নিজেদের বাণিজ্য স্বার্থ রক্ষায় পাশে থাকছে ইউরোপ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বৈঠকে বসবেন। রাশিয়া এবং চীন তো আগে থেকেই ইরানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ইরানের ওপর ফের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের
ইরানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক আছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসাকে ‘ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের নিন্দা করে বলেছে এটি অগ্রহণযোগ্য। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের মূল্য ফ্রান্স দেবে না। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই যুক্তরাজ্যের। ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের নিজেদের বাণিজ্য স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। যেসব কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সহায়তা দেওয়ার কথাও ভাবছে দেশ দুটি।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, তার দেশ ভবিষ্যতেও ইরানকে এ চুক্তির বাধ্যবাধকতার মধ্যে রাখতে যা যা করার দরকার, তা করবে। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে হওয়া চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ায় ‘গভীর হতাশার’ কথা জানিয়েছে রাশিয়া। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও বলছেন, তিনি চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। রুহানির আমলেই ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে এই জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) স্বাক্ষরিত হয়। শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাঁচানো না গেলে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ ফের শুরু করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি বাতিলের প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও বাড়ছে। এয়ারবাস, টোটাল, রিনল্ট ও পিউজিয়টের মত বেশ কিছু ইউরোপীয় কোম্পানি ইরানের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। ইরান পরমাণু চুক্তির পর ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিন ইরানি কোম্পানির ও ছয় ব্যক্তির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুই দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ নতুন এ নিষেধাজ্ঞা দিল। মার্কিন ডলারে আইআরজিসির প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সহায়তা করায় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও এ নিষেধাজ্ঞায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যেসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ট্রেজারি বিভাগ তাদের নাম প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোই আইআরজিসির জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে। যা দিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রভাব বিস্তার ও ‘ক্ষতিকারক কার্যক্রম’ চালাচ্ছে; ওই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই যুক্তরাষ্ট্রের এ শাস্তি, জানিয়েছেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন।
পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে ৯০ থেকে ১৮০ বা এর চেয়েও বেশি দিন লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তার আগেই আইআরজিসির সঙ্গে সম্পর্কের অজুহাতে ছয় ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানের ওপর এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তেহরানের ওপর চাপ বাড়াবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না মার্কিন নাগরিকরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তি ও কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্যে বাধা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের কুদস ফোর্স সিরিয়া থেকে ইসরাইলের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ২০টি রকেট ছুড়েছে বলে অভিযোগ তেল আবিবের। এর মধ্যে চারটি ধ্বংস করা হয়, বাকিগুলো লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে আঘাত হানে বলেও দাবি তাদের। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ায় ইরানি স্থাপনাগুলোতেও পাল্টা হামলা চালায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্স মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা না বাড়াতে ইরান ও ইসরাইল উভয় দেশের প্রতিই অনুরোধ জানিয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি