অনলাইন ডেস্ক:
রোজা আল্লাহ প্রদত্ত একটি অবশ্যপালনীয় ফরজ বিধান। অনেকের ধারণা, যাদের গ্যাস্ট্রিক- আলসার আছে, তাদের রোজা রাখা ঠিক নয়। এ ধারণা অমূলক। এ ক্ষেত্রে লন্ডনের লেউইন্স অ্যান্ড কোং লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত ‘শর্ট প্র্যাকটিস অব সার্জারি’ গ্রন্থটি পড়ে দেখার অনুরোধ করব তাদের।
গ্রন্থটিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে_ পাকস্থলীতে প্যারাইটাল কোষের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এ কোষ থেকে সার্বক্ষণিক বের হচ্ছে আইসাটনিক হাইড্রোক্লোরিক এসিড। এই এসিডের জন্য গ্যাস্ট্রিক ও ডিওনাল আলসার হয়, অন্যদিকে পাকস্থলী খালি থাকলে এই এসিড অতি সামান্য নির্গত হয়। রোজায় মানুষের পাকস্থলী কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই পরীক্ষার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এক ব্যক্তিকে সেহরি খাইয়ে পেট ভর্তি করে দেন এবং তাকে দশ ঘণ্টা সম্পূর্ণ উপবাসে রাখেন। পরে গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড সবচেয়ে কম।
এখন যে বা যারা পেপটিক আলসারের কথা বলে রোজা না রাখার অজুহাত দাঁড় করান, তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোজা বা উপবাসে পেপটিক আলসার হওয়া নাকচ করে দিয়েছে।
ডা. এফ. এম. গ্রেমি বলেন, রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানুষের স্বাস্থ্যের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হলেও শরীরের কোষগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রোজা পালন সম্পর্কে কায়রো থেকে প্রকাশিত ‘সায়েন্স ফর ফাস্টি’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এ গ্রন্থে পাশ্চাত্যের বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রোজার উপকারিতা স্বীকার করেছেন। তাদের অভিমত, রোজা পাকস্থলী ও দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিশেষ করে পরিপাক প্রক্রিয়ায় শারীরিক সুস্থতার যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। রোজা পালনের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহন ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রোজা শেষ করা হয় ইফতার করে এবং ইফতার করতে গিয়ে যেসব উপকরণ বা খাদ্য খাওয়া হয়, তাতে শরীরের সুস্থতা আশ্চর্যজনকভাবে বেশি হয়।
ডা. আর ক্যামফোর্ডের মতে, রোজা হচ্ছে, পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। তিনি আরও বলেন, রোজা পালন আসলেই আত্মশুদ্ধি ও সংযমের অন্যতম মাধ্যম। এতে যেমন স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণ করে তার সানিধ্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থতা এবং মানুষের কু-রিপুগুলো দমিত থাকে।
অনেক বিখ্যাত চিকিৎসকের মতে, রোজার মধ্যে ক্লেশ, কষ্ট, সহিষুষ্ণ ও গরিব-দুঃখীদের ক্ষুধার কষ্টটি উপলব্ধি করা যায়, ফলে রোজাদাররা ক্ষুধার্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। রোজা পালন এমনই একটি পদ্ধতি, এর মাধ্যমে চিন্তা-ভাবনা, উদ্ভাবন, গবেষণা, আত্মিক শক্তির উন্নতি এবং প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সভ্যতার এই চরম উন্নতির যুগেও উপবাস অর্থাৎ রোজার যে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে_ সে সম্পর্কে কারও দ্বিমত নেই। এই পৃথিবীর মানুষকে কোনো না কোনো কষ্ট, ক্লেশ, পরিশ্রম করতে হয়। সেদিক দিয়ে রোজা পালন অর্থাৎ উপবাস সাধনা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
অতএব, আসুন, কোনো ছুতো না খুঁজে রোজা বর্জন করার মনমানসিকতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে সর্বরকম অপকর্ম থেকে বিরত থাকি।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর