নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনায় লেভেল প্লেয়িং নেই’ আওয়ামী লীগ নেতা এইচ টি ইমামের এমন মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার এই কথা শুনলে শিশুও হাসবে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় মোশাররফ এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ ও গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট নামের দুটি সংগঠন।
আগামী ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হবে। একই দিনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও হাইকোর্ট তা স্থগিত করে দেয়। যদিও বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ বাতিল করে আগামী ২৮ জুনের মধ্যে সেখানে নির্বাচন করার নির্দেশ দেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে খুলনার ভোট নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিযোগ জানায়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এইচ টি ইমাম দাবি করেন, খুলনায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সেখানে সরকারি দলের প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন ইমাম।
ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে মোশাররফ বলেন, ‘খুলনায় গাজীপুরের মতোই ঠিক একইভাবে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার। সেই গণজোয়ারকে আজকে তারা ভয়ে ভীতি হয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এইচটি ইমাম একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে নির্বাচন কমিশনে বলেছেন যে, খুলনায় নাকি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই ধরনের কথা শুনে আসলে কী মন্তব্য করবো- একটা শিশুও হাসবে।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যেখানে সরকার, আওয়ামী লীগ তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, তারা সবাই মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে নেমেছে। গতকাল এক রাতে আমাদের দেড়শ নেতা-কর্মী নির্বাচনে ভূমিকা রাখছেন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের প্রার্থী বলেছেন, পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে। আর সেই পক্ষ এসে ইসিতে বলেছে, সেখানে নাকি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। কেন এটা বলেছেন, এজন্য যে গাজীপুরের মতো খুলনায়ও গণজোয়ার ঠেকতে পারছেন না। সেজন্য ভোটের দিন অথবা ভোটের আগের রাতে ভোট চুরির পরিকল্পনা ক্ষমতাসীনদের রয়েছে।’
‘ভোট ডাকাতি হলে প্রতিহত করবে জনগণ’
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, খুলনার জনগণ প্রস্তুত আছে। যেকোনো ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করা হোক না কেন ইনশাআল্লাহ খুলনার জনগণ সেটা প্রতিহত করবে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো রকমের ছলচাতুরি করে ওই নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আগে-ভাগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই বলে আপনারা যে নাটক করছেন শুধু একটাই উদ্দেশ্য- ভোটের দিন ভোট ডাকাতি করতে চান। এটা দেশের মানুষ জানে, খুলনার জনগণ জানে।’
মোশাররফ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখবেন আর দেশে একাদশ নির্বাচন হয়ে যাবে- এটা জনগণ হতে দেবে না।’
এক এগারোর সরকার ঘোষণা দিয়ে মাইনাস টু বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। সেই কুশীলরা এখনো সক্রিয় উল্লেখ করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘যারা মাইনাস টুর পরিকল্পনা করেছিল তারা এখন একজনকে দিয়ে আর একজনকে মাইনাস করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ তখন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চেয়েছিল। এখন তারাই শেখ হাসিনাকে দিয়ে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চায়। যদি একজনকে মাইনাস করতে পারে তাহলে আর একজনকেও তারা মাইনাস করে দেবে।’
‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন করেই মুক্ত করতে হবে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। একটা সময় ধৈর্যের সীমা থাকবে না। তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কঠিন থেকে কঠিনতম আন্দোলনে যাবে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনিডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনজুর হোসেন ঈসা ও গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হুমায়ুন কবির ব্যাপারী বক্তব্য দেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ