২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৯

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে জেএসসি-জেডিসিতে উপকেন্দ্র থাকছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এবার থেকে শুধু মূল কেন্দ্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা থাকায় উপকেন্দ্রগুলোতে (ভেন্যু) আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় সারাদেশে মোট দুই হাজার ৮৩৪টি মূল কেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্র আবার স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে উপকেন্দ্র বসিয়ে পরীক্ষা নেয়। এতে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি থাকলেও এভাবেই জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘জেএসডি-জেডিসি পরীক্ষায় আমরা আর উপ-কেন্দ্র রাখছি না। শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র ফাঁসই রোধ নয়, মানসম্মত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা মনে করছি, আগামী পরীক্ষায় কোনও উপ-কেন্দ্র রাখবো না। কেন্দ্র কমিয়ে আনারও চেষ্টা করবো। যদি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র থাকে, তাহলে সেগুলো বাদ দেওয়া যায় কিনা, তাও দেখবো।’

দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এবার উপ-কেন্দ্র থাকছে না। প্রশ্নপত্র প্যাকেট করা হয় কেন্দ্র অনুযায়ী। উপ-কেন্দ্রে কতজন পরীক্ষার্থী থাকে, তা আমাদের জানা থাকে না। উপ-কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানো হয় মূল কেন্দ্র থেকে। এখানে সময় একটা বিষয়। এছাড়া, প্রশ্নের প্যাকেট খোলা হয় উপ-কেন্দ্রে। সে কারণে প্রশ্নফাঁস এড়াতে উপ-কেন্দ্র রাখা হবে না।’ উপ-কেন্দ্র না রাখার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তারেক বিন আজিজ বলেন, ‘উপ-কেন্দ্র থাকবে না। যদি কোনও কেন্দ্রে বেশি পরীক্ষার্থী থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই কেন্দ্র ভেঙে আরও কেন্দ্র করা হবে। কিন্তু উপ-কেন্দ্র রাখা যাবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ৭৬টি কেন্দ্রে গত বছর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে অনেক কেন্দ্রেই পরীক্ষার্থী বেশি থাকায় উপ-কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এভাবে সারাদেশেই মূল কেন্দ্রের বাইরে উপ-কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’ ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের আওতায় উপ-কেন্দ্র কতটি, জানতে চাইলে তারেক বিন আজিজ বলেন, ‘উপ-কেন্দ্র নির্বাচন করে স্থানীয় প্রশাসন। আমাদের কাছে উপ-কেন্দ্রের তথ্য থাকে না। বোর্ডের আওতায় কতটি কেন্দ্র ও কতটি উপ-কেন্দ্র রয়েছে, তা জানার জন্য কেন্দ্র সচিবদের কাছে তথ্য চেয়েছি। তথ্য পেলেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পরীক্ষায় সারাদেশে মোট দুই হাজার ৮৩৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ৪৯৪টি কেন্দ্রে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীতে মূল কেন্দ্র ছিল ৭৬টি। তবে অনেক কেন্দ্র আবার উপ-কেন্দ্র স্থাপন করে পরীক্ষা নিয়েছে। দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোর আওতায় নির্ধারিত কেন্দ্র ছাড়াও উপ-কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের সহায়তায়। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন বোর্ডের আওতায় কেন্দ্রগুলোতে উপ-কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিবেশ নেই, এমন কেন্দ্র থাকলে, তা বাতিল করে কেন্দ্র কমিয়ে আনা হবে। অন্যদিকে, যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী বেশি সেসব কেন্দ্র ভেঙে নতুন করে পরীক্ষাকেন্দ্র করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ মে) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষাবোর্ডে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষাবোর্ড এ সিদ্ধান্ত বাস্তায়ন করবে।

এদিকে, এই সিদ্ধান্তের আগেই ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কেন্দ্র সচিবদের কাছে মানসম্মত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের তথ্য জানতে চেয়েছে। গত ৩ মে জারি করা চিঠিতে কেন্দ্র-স্কুলের নিজস্ব ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল আছে কিনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কিনা, কেন্দ্র-স্কুলের নিয়মিত শিক্ষকের সংখ্যা কত, কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা কত, মূল কেন্দ্রের পরীক্ষা কক্ষের সংখ্যা কত, বেঞ্চের সাইজ ৫ থেকে ৬ ফুট কিনা, বেঞ্চ সংখ্যা কত, মূল কেন্দ্রের অধীনে উপ-কেন্দ্র কত, তা জানতে চেয়েছে শিক্ষা বোর্ড। অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড একইভাবে কেন্দ্র সচিবদের কাছে প্রতিটি কেন্দ্রের তথ্য জানতে চেয়েছে।

উল্লেখ্য, আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড ছাড়াও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত শুরু হয় নভেম্বরের শুরুতে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ১০, ২০১৮ ১:৫১ অপরাহ্ণ