নিজস্ব প্রতিবেদক:
সমাজ ও পরিবারে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। এ কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এজন্য পাঠদানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার প্রতি জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার বিকেলে রাজধানীর এলজিআরডি ভবনে গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে করা এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন তারা।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০১৭’ এর প্রধান গবেষক মনজুর আহমেদ। তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। শিক্ষক হিসেবে যে অবদান রাখার কথা সেটা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু সুবিধা বাড়ালেই মানুষের মূল্যবোধ বাড়বে না। মানুষের ভেতর থেকে তা জাগ্রত করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আগের দিনের শিক্ষকদের দেখলে আমরা এখনো শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এখনকার শিক্ষকরা তাদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছেন। তাই তাদের মানুষ সেভাবে সম্মান করেন না। তিনি বলেন, শিক্ষকরা এখন ক্লাসে না পড়িয়ে শিশুদের কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য করে। এতে তারা ফায়দা লুটিয়ে নেন। এসব কারণে শিক্ষকদের মূল্যবোধের জায়গা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সমাজ তাদের আর মূল্য দেয় না।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, আমাদের শিখন বা শেখানো পদ্ধতি অতিমাত্রায় তত্ত্বীয়, নির্দেশনামূলক ও শিক্ষকনির্ভর। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিজে নিজে পড়ে বোঝার সুযোগ কম। ফলে শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় শিক্ষকদের প্রতি দারস্থ হচ্ছে এবং এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষকরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছেন। এসব থেকে বের হয়ে আসার জন্য নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার বিষয়বস্তুকে শিখনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা, শিখনকে সুগভীর ও সুদৃঢ় করা এবং তাদের অর্জিত শিক্ষা বাস্তব জীবনে অনুশীলন করার ব্যবস্থা করতে বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ ও সুপারিশ করা হয়েছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সমাজ ও রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ, জেন্ডার সম্পর্কে ন্যায্যতা ও শিশুদের প্রতি আচরণ ও মনোভাব, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রয়োগের জন্য উদ্যোগ গ্রহণসহ নয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের শিখন মূল্যায়ন সংস্কার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা মুখস্তবিদ্যা নির্ভরতা থেকে সরে আসতে পারে। গবেষণা বিশ্লেষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শুধু পাঠ্যপুস্তকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে শিশুদের তা শেখানো যাবে না। এজন্য দরকার সমাজ ও মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন। আগে নিজেকে ঠিক হতে হবে পরে অন্যকে ভালো হওয়ার পরামর্শ দেয়া উচিত কিন্তু আমাদের সমাজে তার উল্টো ঘটনা ঘটছে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহসানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম, ব্রিটিশ হাইকমিশনের বাংলাদেশের ডিএফআইডি প্রধান জানে এডমনসন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গবেষণাটি সম্পন্ন করতে দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় জরিপ করা হয়েছে। একটি মূল্যবোধ জরিপপত্রের সাহায্যে ১৪০০ শিক্ষার্থী, ৫৭৬ শিক্ষক ও ১২৮০ স্কুল কমিটির সদস্য ও অভিভাবকের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ