চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
দফায় দফায় চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া, রেল কর্মচারীদের উপর দুস্কৃতিকারিদের হামলাসহ নানাবিধ বিষয়ে এবার মাঠে নেমেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দেশের ৭৭টি রেলওয়ে স্টেশনে করেছে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাও। একই সাথে রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনও এর প্রতিবাদ করছেন নানাভাবে।
ট্রেনের পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তিার দাবি করেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের উদ্যেগে (ডিআরএম) মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি খুলনায় দায়িত্বরত টিআই(সি) সিকদার বায়েজিত দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছিল। তাছাড়া গত এক বছরে দেড় শতাধিক ঘটনায় নানাভাবে ট্রেন যাত্রী ও রেলের স্টাফদের মধ্যে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। ফলে চলন্ত ট্রেনে এখন বড় আতঙ্কের নাম ‘পাথর নিক্ষেপ’। তাছাড়া এক বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে ২৯ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে ৭০টি ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চল রেলপথে ৩৬ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে ৮০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
উক্ত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) ফিরোজ ইফতেখার, ডিইএন/৩ আতাউল হক ভূইয়া, ডিইএন/২ লিয়াকত শরীফ খানসহ রেলওয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নেই, বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।
রেলওয়ে জিআরপির ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, চলাচলরত বিভিন্ন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার বিষয়ে আমরা নজরদারিতে রয়েছি। কারা, কিভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা ও অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। তাছাড়া বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদারসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে রেলওয়ে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় শুধু বায়েজিদ, সঞ্জিত বা প্রীতি নন- প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারায় আহত হচ্ছেন অনেকেই। সেখান থেকে পরে মৃত্যু বা পঙ্গত্বের ঘটনা ঘটছে। এতে বিপর্যয় নামছে ওই পরিবারে। সেই সঙ্গে দরজা-জানালার কাচ ও লাইট-ফ্যানসহ ট্রেনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক বছরেই পাথর নিক্ষেপের দেড় শতাধিক ঘটনায় আহত হয়েছেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ যাত্রী মিলে দুই শতাধিক ব্যক্তি। এর ভিত্তিতে রেলপথের ৭০টি এলাকা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ঠেকানো যায়নি পাথর নিক্ষেপ। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারের তথ্যও পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেলপথের ৭০টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে পাথর নিক্ষেপ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে রেলপথের সর্বত্রই এ ঘটনা ঘটছে। নানা ব্যবস্থা নিয়েও পাথর নিক্ষেপ বন্ধ না হওয়ায় এসব পয়েন্ট দিয়ে রেল চলাচল ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ