স্পোর্টস ডেস্ক:
সেই গত বছর নভেম্বর থেকে কোচ নেই। তারপর ‘এই আসছেন, আসছেন’ করেও দেখতে দেখতে কেটে গেলো ছয় মাস। কিন্তু নতুন ভিনদেশি কোচের দেখা নেই। রিচার্ড পাইবাস, ফিল সিমন্স, গ্যারি কারস্টেন- কত নামই না শোনা গেছে! পাইবাস আর সিমন্স ইন্টারভিউও দিয়ে গেছেন সেই কবে। এরপর গ্যারি কারস্টেন, পল ফারব্রেসের নাম উচ্চারিত হয়েছে জোরে সোরে।
বোর্ড থেকে বার বার বলা হয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। কথা হচ্ছে কয়েকজনের সঙ্গে। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বার কয়েক সময় সীমাও বেঁধে দিয়ে বলেছেন, আশা করছি অমুক মাসের তমুক সপ্তাহের মধ্যে কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা আর প্রক্রিয়া কাগজে কলমে আর মুখে মুখেই থেকে গেছে। কিছুই আলোর মুখ দেখেনি। জাতীয় দলের নতুন বিদেশি হেড কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পালে নতুন হাওয়া লাগেনি। বরং সময়ের প্রবাহতায় তা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নতুন বিদেশি কোচের দেখা পাইনি। কারো সঙ্গে কথা-বার্তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি’- বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন বিবৃতি দেয়া না হলেও ভিতরের খবর তা-ই। শেষ খবর হলো, বোর্ডের বিদেশি কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত প্রায় স্থবির। যাদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তাদের কারো কাছ থেকেই ইতিবাচক জবাব মেলেনি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে সবাই ‘না’ করে দিয়েছেন। তাই বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা অনেকটাই হতাশ, হতোদ্যম।
জানা গেছে, কোচদের কাছ থেকে তেমন ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ও কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত বোর্ডের শীর্ষ পরিচালকরাও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ কার সঙ্গে কথা চলছে আপনাদের? তিনি কোন দেশের? কি তার নাম? এমন প্রশ্নের জবাবে বোর্ডের এক পরিচালক বলেই ফেলেছেন- ‘আরে, কার সঙ্গে কথা বলবো, সবাই তো ‘না’ করে দিয়েছে। এখন সে অর্থে হাতে কেউ নেই। আমরা প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি।’
তবে কি নতুন কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো, এখন বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমে নতুন কোচের সন্ধানে ব্যস্ত। অর্থাৎ, যাদের সঙ্গে কথা চলছিল সবার জবাব নেতিবাচক। কারণ প্রায় সবাই এখন আইপিএল, বিগ ব্যাশ আর সিপিএল, এসএলপিএল ও পিএসএলে কোচিং করাচ্ছেন। সেখানে মিলছে মোটা অঙ্কের অর্থ। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের সাড়া জাগানো টি-টোয়েন্টি আসর আইপিএল এখন নামি ও হাই প্রোফাইল কোচদের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশে প্রায় সারা বছর কোচিং করালে যে অর্থ মিলবে, এক আইপিএলে কোনো দলের কোচ হতে পারলে তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ পাওয়া যাচ্ছে; খুব স্বাভাবিকভাবেই নামি কোচরা ঝুঁকছেন আইপিএলে। তার সঙ্গে বিগ ব্যাশ, সিপিএল, এসএলপিএল আর পিএসএলের এক আসরে কোচিং করাতে পারলে কথাই নেই। এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরগুলোয় অর্থের ঝনঝনানির কারণেই বাংলাদেশের কোচ মিশন প্রায় ভেস্তে যাবার পথে। কেউ ওইসব আসরের বিপুল অর্থ ছেড়ে বাংলাদেশের কোচ হতে রাজি নন।
জানা গেছে, যাদের কোচ হবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তারা সবাই আইপিএল ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে কোচিং করানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ছুটি কাটানোর শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সে শর্তে রাজি হবার কোনই সুযোগ নেই। আইপিএল ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের সময় কোচ ছুটিতে থাকার অর্থ ওই সময় কোনো সিরিজ থাকলে কোচ ছাড়া খেলতে হবে। তা কি হয়? তাই এখন কোচ বিড়ম্বনায় বিসিবি। বোর্ড যে বিনদেশী হেড কোচ যোগাড়ে হিমসিম খাচ্ছে, তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হলো, খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আজ রাতে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে কোচ প্রসঙ্গে একটি কথাও বলেননি।
সোমবার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এক আন্তর্জাতিক গলফ টুর্নামেন্টের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে গলফ ছাড়াও ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় সিরিজ ও দল গঠন নিয়ে কথা বলেন বিসিবি বিগ বস। গত কয়েক মাসে তিনি যেখানেই মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন, প্রায় প্রতি জায়গায়ই তিনি কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সর্বশেষ আপডেট জানিয়ে কোনো না কোনো মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আজ সেই নাজমুল হাসান পাপন কোচ ইস্যুতে নীরব। একটি কথাও বের হয়নি তার মুখ দিয়ে। এতেই পরিস্কার, কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনোই অগ্রগতি নেই। বরং তা স্থবির হয়ে পড়েছে। কে জানে, কবে কাটবে এ স্থবিরতা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি