২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৩০

ওয়াসার পানি নিয়ে বিড়ম্বনায় বাড়ির মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকা ওয়াসা থেকে নিয়মিত পানি না পেয়ে বাসা ছাড়ছেন ভাড়াটিয়ারা। এ কারণে প্রতি মাসে লোকসান দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাড়ির মালিকরা। রোববার দুপুরে ঢাকা ওয়াসা মডস জোন-৪ ও মডস জোন-১০ এর ফলোআপ গণশুনানিতে এ অভিযোগ করেন বাড়ির মালিকরা।মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে গ্রাহক ও ওয়াসা কর্মকর্তাদের মুখোমুখি এই গণশুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে মধ্য মনিপুরের বাড়িওয়ালা কাব্য অভিযোগ করেন, ‘ওয়াসার প্রতি সর্বনিম্ন প্রত্যাশাটাও নষ্ট হয়ে গেছে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে। কারণ, পানি না পাওয়ার কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে বাসা খালি পড়ে আছে। এরপর থেকে বাসা ভাড়া হচ্ছে না। আমি গত চার বছর ধরে পানির জন্য প্রতিনিয়ত স্ট্রাগল করে যাচ্ছি, তাদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া না পাওয়ার কারণে সাড়ে ৮ লাখ টাকার ওপরে লোকসান গেছে। এছাড়া আমার ও বাড়ির ঋণ রয়েছে, যা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি।’

অভিযোগের জবাবে ঢাকা ওয়াসা মডস জোন-৪ নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ভদ্রলোক লাস্ট এক মাস আগে আমার কাছে এসেছিলেন। এসে আমার কাছে ১৫ হাজার লিটার কোনো টাকা ছাড়াই চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকা ছাড়া পানি দেওয়া সম্ভব না, তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে এক গাড়ি পানি ফ্রি দেই।’ তিনি বলেন, ‘মূলত তার বাড়ির পানির লাইনটা অনেক পূরাতন, যার কারণে পানি পায় না। তবে লাইনটা রি-সংযোগ করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

মধ্য মনিপুরের রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মধ্য মনিপুর অঞ্চলে আসলে পানি নেই। যাদের প্রকৃত সংযোগের মধ্যে পানি আসে, তাদের পানি দুর্গন্ধময়। যা ব্যবহারের উপযোগী না। অন্যরা দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে বা অবৈধ সংযোগে পানি সংগ্রহ করে থাকে।’ মিরপুরের সেকশন-৬ এর রকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘আমরা অধিকাংশ সময় পানি পাই না। যদি ওয়াসা ৬ ঘণ্টা পানি ছাড়ে, সেখানে আমাদের বাড়িতে মাত্র আধাঘণ্টা পানি পেয়ে থাকি। গত মাসে পানির কারণে তিনটা ফ্ল্যাট খালি হয়েছে। এ অভিযোগটা ওয়াসার কাছে বারবার করেছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।’
মধ্য পাইকপাড়ার ১১ নং ওয়ার্ডের হাবিবার রহমান বলেন, ‘পানি নিয়মিত পাই না। এমনকি তিন-চার দিন পরে পানি পাই। এটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে রমজানে আমাদের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকবে না। এছাড়া নিষ্কাশন ব্যবস্থার সমস্যাও রয়েছে, আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’

এ ব্যাপারে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘পাইকপাড়ায় গতকাল রাতে একটি পাম্প স্থাপন করেছি। এখন থেকে আর পানির সমস্যা থাকবে না।’ বড়বাগের নুরজাহান বেগম বলেন, ‘১৪ মার্চ গণশুনানির পরে আমাদের এলাকায় পানির ব্যবস্থা নিয়মিত হয়েছে। কিন্তু পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত।’ পশ্চিম আগারগাঁওয়ের তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘আমি গত শুনানিতে এসেছিলাম। মিটারের সমস্যা ছিল, সেটার সমস্যার সমাধান করেছে। কিন্তু ইদানিং পানি পাচ্ছি না, খুব খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে।’

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে আলহাজ আমীর হোসেন বলেন, ‘গত ১৪ মার্চ দুদকের পক্ষ থেকে গণশুনানির পরে পানি পাচ্ছি। তবে পানি ঘোলা ও পচা। সেনপাড়ার বিলাল হোসেন বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে পানির সমস্যা বিরাজমান। কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এর আগের শুনানিতে এসে একই অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু উপকৃত হতে পারিনি।’ শুনানাতি অধিকাংশই ওয়াসার পানি ঘোলা ও দুর্গন্ধের বিষয়টি তুলে ধরেন।গণশুনানি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন দুদকের পরিচালক মো. নাসিম আনোয়ার। তিনি ওয়াসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য বলেন।

ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, ‘ওয়াসা গ্রাহককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আপনারাই যদি না থাকেন, তাহলে আমাদের দিয়ে কী হবে?’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা থেকে ১৫ কোটি লিটার পানি এনে মিরপুর অঞ্চলের দিকে সরবরাহ্ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে পানির সমস্যা কেটে যাবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ৭, ২০১৮ ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ