২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৪৪

যমজ ফুটবলার বোনের সব কিছু একসাথে হলেও ফলাফল ভিন্ন

স্পোর্টস ডেস্ক:

মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে তাদের পৃথিবীতে আসা। তবে সাফল্যের পথ বেয়ে ছুটে চলাটা হাতে হাত রেখেই। তারা দুই জমজ বোন- আনুচিং মগিনি ও আনাই মগিনি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য। অবশ্য স্বভাবে একজন আরেকজনের একেবারেই উল্টো। খুবই শান্ত-শিষ্ট বড় বোন আনাই। অন্যদিকে চঞ্চল আনুচিং। খেলাতেও ভিন্নতা। আনুচিং খেলেন স্ট্রাইকিংয়ে আর আনাই ডিফেন্সে। মেয়েদের ফুটবলে সাম্প্রতিককালের প্রতিটি সাফল্যে এই যমজ বোনের অবদান সবাই দেখেছেন মুগ্ধ চোখে।

খাগড়াছড়ির সাত ভাইয়া পাড়ার রিপ্রু মগ ও আপ্রুমা মগিনী দম্পতির যমজ মেয়ে এবার দিয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষা। তবে তাদের পরিবারে রোববার মিশ্র অনুভূতি হয়ে এসেছে পরীক্ষার ফল। আনুচিং পরীক্ষায় পাশ করলেও পারেননি বড় বোন আনাই। আনুচিংয়ের এসএসসি পাশের আনন্দের মাঝে তাই কিছুটা বিষাদের ছায়া ফেলে দিচ্ছে আনাইয়ের না পারাটা।

ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের গল্পগুলো এমনিতে সবার জানা। ক’দিন আগেই হংকংয়ে একটি টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়েছে অনূর্ধ্ব-১৫ দল। তার আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে জিতেছে শিরোপা। জাতীয় দলের নিয়মিত আনুচিং ও আনাই প্রতিনিধিত্ব করেছেন এখানেও। নির্মম দারিদ্র থেকে শুরু করে নানা বাঁধা জয় করে বাংলাদেশের মেয়েদের বেড়ে ওঠা। তবে ফুটবল মাঠে কি অকুতোভয় তারা।

সারা বছর বাফুফের কঠোর ট্রেনিং প্রোগ্রামের মধ্যে থাকা। আর সেই ট্রেনিংয়ের ফল মাঠে অনুবাদ করা। তবে শুধু মাঠেই নয়, খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও দারুণ মনোযোগী মেয়েরা। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন যেমন ৮ মেয়ে ফুটবলার। এতো এতো খেলার চাপ, কঠোর ট্রেনিং প্রোগ্রাম, তারপরও তাদের পড়াশুনা থেমে থাকছে না। প্রতিবারই পরীক্ষা দিচ্ছেন এক ঝাঁক করে মেয়ে। স্কুল পেরিয়ে পা রাখছেন তারা কলেজে।

পরীক্ষার রেজাল্ট হবে। রোববার সকাল থেকে নাকি দুঃচিন্তায় কিছু মুখেই দেননি আনুচিং। আমি তো রেজাল্টের জন্য কিছুই খাইনি। রেজাল্ট শুনে তারপর খাওয়া দাওয়া করলাম। আর একটু মন খারাপ হয়ে গেছে দিদি পাশ করতে পারেনি বলে।’

রাঙামাটির ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন আনুচিং ও আনাই। এই মুহূর্তে মেয়েদের ফুটবল দল ফুটসাল টুর্নামেন্টে খেলতে থাইল্যান্ডে রয়েছে। যে দলটাতে খেলছেন আনাই। ফাইভ ‘এ’ সাইড টুর্নামেন্টে দলে সুযোগ পাননি আনুচিং। তাই বাবা-মার সঙ্গে বাড়িতে তিনি। পরীক্ষার ফলের দিনটা বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গেই কাটাতে পারছেন আনুচিং। আনুচিং ও আনাই মোট সাত ভাই বোন।

পরিবারে পরীক্ষার ফলের প্রভাব জানতে চাইলে আনুচিং বললেন, ‘আব্বু- আম্মু অনেক খুশি। তবে দিদির জন্য মন খারাপ। দুজনে এক সঙ্গে পাশ করতে পারলে ভালো লাগতো। অনেক বেশি মজা হতো।’

ফুটসালে এদিন চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের। আনাইয়ে সঙ্গে তাই তখনো কথা বলা হয়নি আনুচিংয়ের। আনাই জানেন না তার রেজাল্ট। জানলে নিশ্চিতভাবেই মন খারাপ হবে তার। তখন ছোট বোনের সাফল্যে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও দুঃখ ভুলতে চাইবেন। তারা দুই বোন একে অন্যের সবচেয়ে ভালো বন্ধুও।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ৬, ২০১৮ ৬:৩০ অপরাহ্ণ