২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২২

ভারতের সঙ্গে সব চুক্তিই হয়েছে দেশের স্বার্থে : প্রধানমন্ত্রী –

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভারত সফরকালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি আওয়ামী লীগ সরকার কখনো করেনি, করবেও না। তাই ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে- এ ধরনের বিবৃতি সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া, অবিবেচনাপ্রসূত ও দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তার সবগুলোই দেশের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে।

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্যের লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

সংসদ নেতা আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিষয়ে চীন, রাশিয়া, কুয়েত ও কাতারসহ অনেক দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক রয়েছে। কিন্তু সরকারে থাকতে বিএনপিই চীনের সঙ্গে গোপনে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এই চুক্তির ব্যাপারে দেশের জনগণ ও সংসদকে একটি কথাও জানতে দেয়নি তারা।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে সম্পাদিত ১১টি চুক্তি, ২৪টি সমঝোতা স্মারক এবং দুটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপরাটিং প্রসিডিউর)র বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সমুন্নত রেখেই দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং এসওপি স্বাক্ষর হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে তা এদেশের জনগণের জীবনমান উন্নিতকরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, যা ভারত সফরের একটি বড় অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার যা কিছুই করেছে, তার সবগুলোই জনগণের স্বার্থে, কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির পথ ধরেই বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সরকার দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দারিদ্র্য নিরসনে সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। এগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলো চলমান রয়েছে। কাজেই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে- তার সবগুলোই দ্রুতই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত সফরকালে দু’দেশ ৬২ দফা সংবলিত একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করেছে, যাতে দু’দেশের চলমান সম্পর্ক এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যত দিক-নির্দেশনা সুষ্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। দেশবাসীর অবগতির জন্য ইতোমধ্যেই এই ইশতেহার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ মা- বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তার কোনোটিই দেশের স্বার্থবিরোধী নয়।

বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি চুক্তি প্রসঙ্গে একই প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে চুক্তির বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক এবং তৎপর।

ভারত সফরকালে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জোর আহ্বান জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দু’দেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই তিস্তার পানিবণ্টনের মাধ্যমে সমাধান হবে। অন্যান্য নদীর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান, গণহত্যা দিবসের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টায় ভারতের সহযোগিতা কামনা চাইলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। যা যৌথ ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে যা দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা করেন।

প্রকাশ :মে ৩, ২০১৭ ৮:৪২ অপরাহ্ণ