নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার জামিন শুনানির বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, তার অসুস্থতার কথা যেন আদালতে তোলা হয়। শনিবার বিকালে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদার সঙ্গে দেখা করে এসে এমন নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জামিন বিষয়ে কথা বলতে শনিবার বিকাল ৪টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান তার পাঁচজন আইনজীবী। এরা হলেন- খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আবদুর রেজ্জাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
রেজ্জাক খান বলেন, “ম্যাডাম বলেছেন, ‘আমি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন’। জেলে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট- এটা সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপনের জন্য আমাদের তিনি বলেছেন।”
মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে এনে তা দেখে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে সর্বোচ্চ আদালত গত ১৪ মার্চ জামিন স্থগিত করে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে। এরপর ১৯ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়ে আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন।
জামিন প্রশ্নে আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে দুই সপ্তাহের মধ্যে সার সংক্ষেপ জমা দিতে আর আসামিপক্ষকে পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে সার সংক্ষেপ দিতে বলা হয়।
কারাগারের বাইরে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “হাই কোর্ট বিস্তারিত শুনানি করে ম্যাডামকে জামিন দিয়েছেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এবং আমার ৫০ বছরের ক্রিমিনাল প্র্যাকটিসে পাঁচ বছর সাজার পর হাই কোর্ট বিভাগ যখন জামিন দেয় উচ্চ আদালত সেই জামিন কখনো স্থগিত করেননি। এখানে শুধু স্থগিতই করেননি, এখানে তারা পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় দিয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। “আমরা আশা করি, বিশ্বাস করি, দেশে যদি আইনের শাসন বিন্দুমাত্র থাকে তাহলে অবশ্যই ৮ তারিখে ম্যাডাম জামিন পাবেন।”
আরেক আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা ম্যাডামকে দেখতে এসেছিলাম আইনজীবী হিসেবে। ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। তার যে বাম হাত তিনি নাড়াতে পারেন না, তা শক্ত হয়ে গেছে এবং ঘাড়েও তার সমস্যা আছে। অর্থাৎ এই রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বন্দি থাকা অবস্থায় যেরকম অবস্থা হয় তাই ম্যাডামের হয়েছে। ম্যাডামের বয়সও চিন্তা করতে হবে, তার বয়স ৭৩ বছরের উপরে।
“আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি ম্যাডামের যে চিকিৎসা দরকার তা জেলখানায় সম্ভব নয়। ম্যাডামের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে হওয়া দরকার।”
তিনি আরো বলেন, “আপনারা দেখেছেন জেল কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখেছে তার চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান, তিনি আজকে জেলখানায় আছেন, কী মামলায় আছেন তা আপনারা জানেন। একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় তিনি আজকে বিনা চিকিৎসায় জেলখানায় কষ্ট পাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।” এর আগে শুক্রবার খালেদা জিয়ার কয়েক স্বজন কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করেছেন।
দৈনিক দেশজনতা/ এন আর