২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:৫০

গাজীপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা

আতিকুর রহমান , গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল ৩ মে বৃহস্পতিবার সকালে তার ১৯দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সকাল ১০টার দিকে তার টঙ্গী বাসভবনে ওই ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাসাসের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবুল আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় সদস্য ডাঃ মাজহারুল আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল মতিন, আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা এস এম রুহুল আমিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

দফাগুলো হল : ১) নগরায়নের মাস্টার প্লান প্রণয়ন-দেশী-বিদেশী নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে এই প্লান প্রণয়ন করা হবে এবং এরই ভিত্তিতে সকল উন্নয়ন কার্মকান্ড পরিচালিত হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ‘নাগরিক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে নাগরিকদের মতামত নেওয়া হবে।

২) নগরভবন নির্মাণ-গাজীপুর পৌরসভার পুরোনো ভবনে স্বল্প পরিসরে এখনো চালাতে সিটি কর্পোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এজন্য বিশে^র সেরা নগরভবনগুলোর সাথে মিল রেখে প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ এবং পরিকল্পনাবিদদের তত্বাবধানে নির্মিত হবে গাজীপরের ‘নগরভবন’।

৩) সেবা দানকারী অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়- পুলিশ, সড়ক ও জনপথ, ডেসকো, পল্লী বিদ্যুৎ, টি এন্ড টি ইত্যাদি সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে সুষম সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করব।

৪) দুর্নীতি দরীকরণ ও স্বচ্ছতা : আমি বিজয়ী হলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সব ধরণের সেবা দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ করব। দুর্নীতির সঙ্গে আমি কোনো আপোস করবো না। দুর্নীতি বন্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করব। নাগরিকদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে পেশীশক্তি, মাস্তানি, টেন্ডারবাজিসহ সকল অনৈতিক প্রভাববলয় থেকে মুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সকল দরপত্রের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

৫) শিক্ষা-শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নের লক্ষে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সম্পৃক্ত করে উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করবো। ভোকেশনাল, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করে বেকার সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতিম ও দুঃস্থ, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করবো। নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সমাজ উন্নয়নে সম্পৃক্ত করবো। প্রত্যেক এলাকায় গণপাঠাগার স্থাপন করা হবে।

৬) খাদ্য সেবা ও নিরাপদ খাদ্য- ‘আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার’ বা ‘নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের এবং বস্তিবাসী নাগরিকদের জন্য সুলভে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে অনলাইন সেবার আওতায় আনা হবে। ‘অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা’র ওপর ভিত্তি করে কলকারখানার দূষণ কার্যক্রম পরিশীলিতকরণ, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজকে যথাযথকরণ এবং দূষণকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

৭) আবাসন ব্যবস্থা-গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের জন্য সু-পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প করা হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে স্বল্পমূল্যের বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।

৮) নিরাপত্তা-নগরীতে সিসি ক্যামেরা, কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ করে নগরবাসীকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সু-সম্পক তৈরি করে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

৯) যাতায়ত-সব সড়ক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলাচল উপযোগী করা হবে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে পুরানো রাস্তার সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

১০) যানজট ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন-টঙ্গী বাজার থেকে শুরু করে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে কোণাবাড়ি পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। যানজট নিরসনের কাজটি মূলত: ট্রাফিক বিভাগের। তারপরেও সমন্বিত উদ্দ্যোগের মাধ্যমে উন্নত ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতা তৈরি করে গাজীপুরকে সচল ও গতিময় রাখা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। যানজট নিরসনে নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

১১) নগরীর পরিচ্ছন্নতা-গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় (স্কুল, কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, বাজার, ইত্যাদি পয়েন্টের কাছাকাছি) আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। ফুলের বাগান পরিবেষ্টিত এসব গণশৌচাগারে থাকবে-নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কক্ষ, লকার ব্যবস্থা, হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, গোসলের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং প্রশিক্ষিত পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও কেয়ারটেকার। সূর্যোদয়ের পূর্বেই সড়কের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ করা হবে। সড়কে ও সড়কের পার্শ্বস্থ বৃক্ষরাজিতে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে ধুলা-বালি নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরণের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আধুনিকীকরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

১২) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও দাতাদের সহায়তা নেয়া হবে। এলাকাভিত্তিক ময়লা সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। বর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের মতো সম্পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত থেকে আচ্ছাদিত পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া হবে।

১৩) সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব নগরায়ন-পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোকে ঘিরে পরিকল্পিত বৃক্ষায়নের মাধ্যমে সবুজায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো। বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ গাজীপুর গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। শব্দদুূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।

১৪) জলাবদ্ধতা দূরীকরণ-এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

১৫) বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ-৫৭টি ওয়ার্ডেই বিদ্যমান গভীর নলকুপগুলো সচল রাখতে ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকুপ স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গড়ে তুলে ব্যবহৃত পানি যেন পরিবেশ দূষণের কারণ না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

১৬) বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহ-নগরবাসীর জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের সব কয়টি ওয়ার্ডে পল্লী বিদ্যুতের পরিবর্তে ডেসার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব এলাকায় গ্যাস লাইন নেই সেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ লাইন স্থাপনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালাবো।

১৭) ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদন-নগরের ভেতর পার্ক, মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান চিহ্নিত করা হবে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার উপযোগী করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করা হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে গণগ্রন্থাগার (লাইব্রেরি) স্থাপন ছাড়াও বিশেষ বিশেষ জায়গায় আরও কয়েকটি আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি চাল করার ব্যবস্থা করবো। বঙ্গতাজ অডিটোরিয়াম ও টঙ্গী অডিটোরিয়ামকে ব্যবহার উপযোগী ও আরো আধুনিক করে গড়ে তুলবো। তরুণদের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

১৮) নাগরিক সেবা আধুনিকীকরণ-নাগরিক সেবা, অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চাল করা হবে। মাসে অন্তত নির্দিষ্ট একদিন মেয়রকে সরাসরি ফোন করে নগরবাসী তাদের অভিযোগ, পরামর্শ ও মতামত জানাতে পারবে। নগরবাসীকে প্রতিটি সেবার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য একটি ‘নগর তথ্য কেন্দ্র’ খোলা হবে। নাগরিকদের সুবিধার্থে অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক পরিচালনা ও অনলাইন আবেদনের সুবিধার্থে এলাকাভিত্তিক ফ্রি ইন্টারনেট (ওয়াইফাই) এর ব্যবস্থা করবো।

১৯) অন্যান্য কর্মসূচী-অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে গাজীপুরবাসীর ঝাপিয়ে পড়ার দিবসটি (১৯ মার্চ) যথাযথ মর্যাদায় যেন পালিত হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। এই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের নামে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যাক্তি কিম্বা প্রতিষ্ঠানকে বৃত্তি প্রদান করা হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ধর্মের নাগরিকদের সমাহিত করার জন্য পর্যাপ্ত কবরস্থান ও শ্মশান গড়ে তুলে তাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী, মনোরম ফুলের বাগান, বৃক্ষরোপণসহ যার যার ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা হবে। লাশবাহী পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হবে। সাংবাদিকদের উন্নয়নে তাদের প্রেসক্লাবকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ৪, ২০১৮ ৭:১২ অপরাহ্ণ