লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরের মাঠে মাঠে বোরো ধানে উদ্বেগজনকভাবে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ বছর বুরো ধানের বাম্পার ফলনের আশায় গুড়ে বালি হয়ে দেখা দিয়েছে এই ব্লাস্ট রোগ। কৃষকরা শেষ মূহুর্ত পর্যন্তও বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধেছিলেন। কিন্তু পাকার আগ মূহুর্তে ছত্রাকের আক্রমনে মাঠের পর মাঠ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বোরো চাষের শুরু থেকে নিবিড় যত্নে লালন করা কৃষকের স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে রূপ নিতে চলেছে। অথচ মাত্র কদিন আগেও যে জমির সবুজ কচি ধান দেখে তাদের মন জুড়িয়েছে। আজ তা চিটিতে রূপান্তিরিত হয়ে রাতের ঘুম হারামের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কৃষকের এই সংকটময় সময়েও কৃষি অফিসের সহানূভুতি বা পরামর্শ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা শুধু এলাকার বাজারে এসে সারের দোকানে বসে থাকে । প্রভাবশালীদের সাথে চায়ের আড্ডা চালান। অথচ আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অতি যত্নে যে ফসল তৈরি করি, সেগুলো সরেজমিনে গিয়ে দেখা বা পরামর্শ দেওয়া কেহ নেই। শুধু তাই নয় কোন এলাকায় কোন উপসহকারী দায়িত্বে আছেন তাদেরকে অধিকাংশ কৃষকই চিনেন না বলে জানান। যারা তাদেরকে চিনেন তারা এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এ বিষয়ে দুয়ারিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী উজ্জল কুমার বলেন, আমি তো কৃষকদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখি। তবে হয়তো যারা আপনাদের অভিযোগ করেছে তারা আমাকে চিনেননা। আর সবার সাথে তো যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। ওয়ালিয়া ইউনিয়নের এক উপসহকারী মোখলেসুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সব সময় মাঠে থাকি। এলাকায় কোন সমস্যা নাই। কেউ যদি অভিযোগ করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাংবাদিকদের একটি টিম সরেজমিনে উপজেলার ওয়ালিয়া, দুয়ারিয়া, কদিমচিলান, এবি ও লালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা এসব অভিযোগ করেন। তবে সব চেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো তাদের অধিকাংশই কৃষি উপসহকারীদের নাম জানেন না বা তাদেরকে চিনেন না। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের নান্দ-রায়পুর মাঠে গিয়ে আতিয়ার রহমান নামের এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এ বছর ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। অধিকাংশ জমিতেই ছত্রাকের আক্রমনে ধান চিটা হয়ে গেছে। আবার কোন কোন জমিতে ধানের পাতা পর্যন্ত মারা গেছে। অথচ কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে দেখেও না, পরামর্শও দেয় না। কোন ক্রমেই এসব ধানের জমিতে কিটনাশক/বালাইনাশক ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। বোরো চাষের আগে পরে কোন উপসহকারীর পরামর্শ পায়নি। অথচ আমি এই এলাকায় পাঁচ-জন ভালো আবাদি কৃষক থাকলে তাদের মধ্যে একজন। দুয়ারিয়া এলাকার কৃষক নয়া শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। আমার অধিকাংশ জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের লোকজন সারের দোকানে এসে বসে থাকে। মাঠে কখনো নামে না। এত কীটনাশক প্রয়োগ করলাম কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। একই মাঠে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শহিদুল ইসলামের সাথেও। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, এই যে মাঠ কে মাঠ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা সঠিক কোনো পরামর্শ পাচ্ছি না। কোনো রকমের সভা সমাবেশ বা লিফলেট দিয়েও আমাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির লোকজন এসে তাদের ওষুধ দিতে বলে। কিন্তু কোনটা আসল কোনটা নকল বুঝিনা। যে যা বলে তাই প্রয়োগ করি। মাঝগ্রাম এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, আমি এ বছর চার বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। বোরো চাষের আগে পরে কোন প্রকার পরামর্শ পায়না। তারপরেও খুব ভালো ফলনের সম্ভবনা ছিলো। কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ পোকার আক্রমণে সব ধানের শীষ মরে যেতে শুরু করে। আমি অনেক যোগাযোগ করেও উপ-সহকারীদের জমিতে আনতে পারিনি। পরে যখন তারা এসে পরামর্শ দিলো তখন আর কিছুই করা গেলো না। অনেক ওষুধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, এ ব্যাপারে আমি এখন কিছু বলতে পারবো না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ