নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবিত্র রমজান মাস আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে চলে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। হঠাৎ করেই বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো পাল্টে যায়। তাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে খাদ্যাভ্যাসে এ সময়। পরিবর্তনগুলো মানিয়ে নেওয়া প্রথম দিকে একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই শরীরের উপর প্রভাব পড়ে। সিয়াম সাধনার মাসটি আপনি কিভাবে কাটাবেন সে সম্পর্কে থাকছে কিছু তথ্য। পবিত্র রমজান মাসের আগে প্রত্যেক মুসলমানের চিকিৎসকের কাছ থেকে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনি যদি স্বাভাবিক বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারীও হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও এ মাসে সচেতন থাকুন। আর সে জন্যে একটি খাদ্য তালিকা ও পরিকল্পনা তৈরি করুন। খাবার তালিকায় অবশ্যই পুষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া জরুরী। পর্যাপ্ত পানি পান ও বিশ্রাম নেয়ার দিকটিও খেয়াল রাখবেন।
আপনি যদি একটু বেশি ঘুমানোর আশায় সেহরি বাদ দিয়ে থাকেন, তবে সবচেয়ে বড় ভুলটি করতে যাচ্ছেন। সেহেরি আপনার দিনের ফার্স্ট মিল, এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। সেহেরি না খাওয়ার কারণে শরীরে মেটাবলিক হার কমে যায়, যা কারণে ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়। যা আপনার ওজন বৃদ্ধি করে।
রোজার সময় ব্যায়াম নিয়মিত করা বেশ কঠিন। ইফতার এবং সেহেরির খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটুন। এটি আপনার মেটাবলিক রেট সচল রাখতে সাহায্য করবে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেবে। মহানবী (সঃ) এর গোল্ডেন নিয়মটা মেনে চলুন। সম্পূর্ণ পেট ভরে না খেয়ে। পেট কিছুটা খালি রেখে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং এক তৃতীয়াংশ পেট খালি রাখুন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং প্রসেসড ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন রোজার সময়টুকু।
ইফতারের সময় তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে কিছুটা ধীরে সুস্থে ইফতার করুন। প্রথমে খেজুর এবং পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গার পর ধীরে সুস্থে ভারী খাবার খাওয়া শুরু করুন। তাজা ফল, সবজি অথবা স্যুপ রাখতে পারেন খাদ্য তালিকায়। ভাজাপোড়া খাওয়ার পরিবর্তে বেকড সমুচা, সিদ্ধ আলু, মোমো, চাপাটি ইত্যাদি খাবার ইফতারে এবং সেহেরিতে রাখুন।
সময় করে দুপুরে হালকা একটি ঘুম দিন। এটি সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে কাজে শক্তি দিবে। ইফতার এবং সেহেরির সময়ের মধ্যে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। তবে মিষ্টি পানীয়, জুস ইত্যাদি পান করার চেয়ে পানি পান করা ভালো।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি হজমে সমস্যা তৈরি করে। যা ডায়ারিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
রমজানের সময় আরেকটি বিষয় বেশ লক্ষনীয়। সারা দিনে রোজা রাখার ফলে শরীর পরিশ্রান্ত এবং পরিশুদ্ধও হয়। ফলে ছোটখাটো রোগব্যাধি থাকলে তা সেরেও যায়। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে এ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এ সময়। কিন্তু আমাদের দেশে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় অনেকেই পেট পুরে খেতে পছন্দ করেন। আর মেনুতে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবারই বেশি থাকে। বরং সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী মাগরিবের আজানের পর রোজা ভেঙে কয়েকটি খেজুর খাওয়া উত্তম। এর সঙ্গে দুধ, পানি, স্যুপ বা ফলের জুস খাবেন। কারণ সারাদিন অভুক্ত থাকার পর স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাবার পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। অতিরিক্ত খাবেন না।
সন্ধ্যার দিকে ক্যাফেইন জাতীয় কোনো পানীয় অর্থাৎ চা, কফি বা সোডা জাতীয় পানীয় বা কোল্ড ড্রিংস যেমন কোক, পেপসি ইত্যাদি পান করবেন না। যেখানেই থাকুন বেশি করে পানি পান করুন। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশি করে পানি পানের অভ্যাস করুন।
রোজার সময় হালকা ব্যায়াম বেশ উপকারী। প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে নিয়মিত ১৫-২০ মিনিট হাটার অভ্যাস করতে পারেন। চিকিৎসকের কাছে মাল্টি-ভিটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ নিতে পারেন। তবে সুষম খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস করলে অতিরিক্ত ভিটামিনের কোনো প্রয়োজন নেই।
দিনে কয়েকবার নির্দিষ্ট সময় ব্রাশ ও দাঁতে ফ্লস ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনো খাদ্যকণা দাঁতের ফাঁকে আটতে থাকলে, তা বের হয়ে যাবে ও মাড়িকে সুস্থ-সবল রাখবে। নিয়মিত হাত ধোঁয়ার অভ্যাস করুন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। কারো সর্দি-কাশি বা হাঁচি হলে সাবধান থাকুন। কারণ এর মাধ্যমে আপনার শরীরে ভাইরাস জ্বর জাতীয় কোনো রোগের জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। আর ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন।
পর্যাপ্ত ঘুমের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ