কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ায় ইয়াবা সেবনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসী, পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উখিয়ার তাজনিমারখোলা বার্মাইয়াপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীসহ আরও তিনশ’ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আজ বুধবার উখিয়া থানায় একটি মামলা করেছে।
সরেজমিনে তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে গ্রামবাসী, রোহিঙ্গা ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বার্মাইয়াপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের পাশের গ্রামে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক ইয়াবা সেবন করছিল। এসময় কয়েকজন পথচারী বাড়ি যাওয়ার পথে টর্চের আলো ফেললে ঘটনার সূত্রপাত হয়। একপর্যায় ইয়াবা সেবনকারী রোহিঙ্গা যুবক ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ক্যাম্পের এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করলেও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
আরও জানা যায়, ওই উত্তেজনার সময় গুজব উঠে শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রামের কবির আহমদের ছেলে মাহামুদুল হককে (২৪) রোহিঙ্গারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এ গুজবের সূত্র ধরে ক্যাম্পে অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হলে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও তাজনিমারখোলা ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নালের নেতৃত্বে কয়েক শতাধিক উত্তেজিত গ্রামবাসী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে অবস্থান নেয় এবং পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গালাগালি শুরু করলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘটনাস্থলে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ রেখে বাকি পুলিশ সদস্যরা কথিত অপহৃত মাহামুদুল হককে (২৪) উদ্ধারের জন্য ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলে অবস্থান নেওয়া উত্তেজিত জনতা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সামনে পুলিশের উপর হামলা ও এলোপাথাড়ি মারধর করে একটি অস্ত্র ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থলে এপিবিএন ফোর্স মো. ইলিয়াছ হোসেন, শাওন আহমদ, ইমন কবির, ইয়াছিন খানসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাকসুদ আলম জানান, উত্তেজিত গ্রামবাসী ও রোহিঙ্গার হামলায় কর্তব্যরত পুলিশের একটি শটগান ভেঙে যায়। এসময় রোহিঙ্গা-গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে গ্রামবাসী কবির আহমদ (৪০), মোহাম্মদ নুর (২৬), মোখলেছুর রহমান (৩০), শফিকুর রহমান (১৮), আব্দুস সালাম (৪০)সহ ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে। তিনি আরো জানান, মাহামুদুল হক নামের যে যুবককে রোহিঙ্গাদের দ্বারা অপহরণ করা হয়েছে মর্মে যে গুজব রটিয়েছে সেই মাহামুদুল হক জানিয়েছে, গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে সে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল।
তাজনিমারখোলা আশ্রয় শিবিরে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ লাভলু সিকদার গ্রামবাসীর হামলায় চার পুলিশ সদস্য আহত সহ একটি অস্ত্র ভাঙচুরের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় উপস্থিত থেকে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধূরী স্থানীয় গ্রামবাসীকে উসকিয়ে দেয়ার অভিযোগে তাকে সহ তিন শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এব্যাপারে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্রামবাসী ও রোহিঙ্গার মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পরপরই ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপর হামলার ব্যাপারে তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এঘটনা নিয়ে তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ