১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৩৭

জনতা সমঝোতার আগে তফসিল মানবে না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতার আগেই নির্বাচন কমিশন অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণা দেয়ার সমালোচনা করেছে বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সমঝোতা ছাড়া তফসিল হলে তা রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বুধবার দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ফখরুল।

গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে এক আয়োজনে কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, আগামী অক্টোবরেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন তারা। কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অক্টোবরের কত তারিখে জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করা হবে সেটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

নির্বাচনে ভোটের আনুষ্ঠানিকতার দিনক্ষণ জানানো হয় তফসিলে। কোন তারিখের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হবে, যাচাই বাছাই হবে কবে, প্রতীক বরাদ্দ বা ভোট কবে হবে, সেটা জানানো হয় এতে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে।

দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২৯ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের আয়োজন করতে হবে।

তবে বিএনপি এই নির্বাচন নিয়ে এখনও ২০১৪ সালের মতোই অবস্থান নিয়ে আছে। তারা এখনও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। আর এ বিষয়ে আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে চাইছে তারা। যদিও সরকার বিএনপির দাবিকে পাত্তা দিচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, তাদের দাবি বিবেচনায় না নিয়ে তফসিল ঘোষণা হলে তা সংকট তৈরি করবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কারো সঙ্গে কথা না বলে একতরফাভাবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে তা কোনো রাজনৈতিক দলই মেনে নেবে না।’

‘আমরা বরাবরই বলে আসছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা। এখানে যে সংকট সেটা থেকে উত্তরণের জন্য বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধান হওয়া দরকার।’

নির্বাচন কমিশনকেও দক্ষ মনে করেন না ফখরুল। বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলে আসছি এই নির্বাচন কমিশন দল নিরপেক্ষ নয়। এদেরকে সরকার তৈরি করেছে। এদের দ্বারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। যে নির্বাচন কমিশন আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি তাতে তাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কোনো যোগ্যতাই নেই।’

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সরকারের ইচ্ছায়

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানা পাল্টেছে নির্বাচন কমিশন। কোনো আসনের পরিধি বড়, হয়েছে, কোনোটি হয়েছে ছোট। গত মার্চে কমিশন মোট ৩৮টি আসনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল। তবে আপত্তি যাচাই বাছাই শেষে ৩০ এপ্রিল ২৫টি আসনের নাম ঘোষণা করে তারা।

এই সীমানা নির্ধারণেও আপত্তি আছে ফখরুলের। বলেন, ‘সরকার যা নির্দেশ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন তাই করছে। এখানে তাদের নিজস্ব কোনো চিন্তা, নির্বাচন কমিশনের যে নিয়ম সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দেয়ার কথা সেটা তারা করছে না। যে ব্লু প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে সেই অনুযায়ী তারা কাজ করছে।’

রাজনীতিকে অন্ধকার গহ্বরে নিচ্ছে আ.লীগ

সাম্প্রতিক ভারত সফরের পর ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের ‘দাওয়াতে’ আওয়ামী লীগ নেতাদের অংশ নেয়ার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।

প্রায় সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধান দলগুলোর নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানায় পশ্চিমা শক্তিগুলো। বিএনপিও এর বাইরে নয়।

বার্নিকাটের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে পরদিন এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়ছেন, তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

এই বৈঠকের পর রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে- এমন প্রশ্ন ছিল একজন গণমাধ্যমকর্মীর। জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভব না। তবে এতটুকু বলতে পারি রাজনীতিকে ভয়াবহ অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

‘বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ ওপেন না, জনগণের মতামতকে গ্রহণ না করে আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে, একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য অন্ধকার গহ্বরের দিকে রাজনীতিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না

অপর এক প্রশ্নে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেও নিজের মতামত জানিয়ে দেন ফখরুল। বলেন, ‘সবাই জানে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে কী ঘটছে।’

‘আমরা গাজীপুরের এসপিকে প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু তা করা হয়নি। আমাদের শরিক দলের (জামায়াত ইসলামী) ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন (জামায়াত নেতা এস এম সানাউল্লা) তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় এখানে পুলিশ কী ব্যবহার করছে। তাই এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে কোনো কারণ আছে আমরা মনে করি না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিমসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ২, ২০১৮ ১:২৯ অপরাহ্ণ