নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝড়ের পর প্রবল বর্ষণে জলজটে আক্রান্ত চট্টগ্রাম নগরী এখন পানিতে থই থই করছে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলজট; অনেক জায়গায় নৌকা নিয়েও চলাচল করছে মানুষ। গত মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা। এরপর তা বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অঞ্চল পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। এই ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে ভারি ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয় এবং গভীর রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত চলে ভারি বর্ষণ। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত্ চৌধুরী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৭৬ মিলিমিটার এবং রাত ১২টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে রাতে নদীতে জোয়ার থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে নগরীর ষোলশহর, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া ও আরাকান সড়কের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সকালে বাসা থেকে বেরিয়েই কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পানিতে সড়ককে ডুবে থাকতে দেখেন নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। সকালে অফিসগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জলজটের কারণে বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয় যানজট। তবে বেলা বাড়ার পর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে সঞ্জয় চৌধুরী জানান, বাসা থেকে বহদ্দারহাটে তার অফিসে যাওয়ার পথে চকবাজার বড় গ্যারেজ থেকে বাদুড়তলার বিভিন্ন অংশে এবং বহদ্দারহাট মোড়ে পানির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তায় যানজট থাকার পাশাপাশি সুযোগ বুঝে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিভিন্ন সড়কে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এবং ওয়াসার মেরামত কাজের জন্য রাস্তা কাটা থাকায় আরাকান সড়কের বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে গেছে। আরাকান সড়কের বিভিন্ন অংশে রাস্তা কাটার কারণে পানি ওঠার পাশাপাশি যানজট বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বিভিন্ন স্থানে কোমর থেকে বুক সমান পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সড়কে যেমন রিকশা চলেছে, তেমনই নৌকা নিয়েও মানুষকে চলাচল করতে দেখা যায়। ওই এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন গতকাল তারা অফিসে যেতে পারেননি। চট্টগ্রাম কর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার রাশেদ রেজা ডিকেন জানান, সিডিএ ১, ২৩ ও ২৮ নম্বরে বুক পর্যন্ত পানি জমে আছে রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকেছে। সিডিএ ১২ নম্বরের বাসিন্দা ডিকেন বলেন, ‘এ এলাকায় আছি প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে। এ রকম অবস্থা আগে দেখিনি। ভোর থেকে আমার বাসার রাস্তাও কোমর পানিতে ডুবে আছে, বের হতে পারছি না।’ চট্টগ্রামের বন্দর থানা ও ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণেও সকালে পানি ওঠে বলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান। সকাল ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস এলাকায় পানি সরে গেলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্দর থানা প্রাঙ্গণে পানি ছিল। মোরার আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার পর এবার বৃষ্টির পানিতে স্থবির হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের নগরজীবন। গত মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টির কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চল পানিতে থই থই করছে। নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলজট ও যানজট।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ