ঢাবি প্রতিনিধি :
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। একই সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় থাকা শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন সেইজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে অভিযোগ বক্স চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনাকারী ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে তাঁদের অভিমত তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, রোবায়েত ফেরদৌস, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক রশিদুল হাসান, জবি শিক্ষক অধ্যাপক নাসির আহমেদ প্রমুখ।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, কোটা আন্দোলনে পুলিশের আক্রমণ করার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। সরকারের দায়িত্ব ছিল এর আগেই সবকিছু সমাধান করা। এখন মামলা দিয়ে বিষয়টি আরও জটিল করে তোলা হয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনে হামলা নিন্দনীয়। আমি মনে করি এই হামলা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের পক্ষ থেকে আসেনি।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন হলে সবাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দূরে সরে যান। যারাই ক্ষমতাই আসেন তারাই একই কাজ করেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম টিকিয়ে রাখতে হবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে একটি অভিযোগ বক্স চালু করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নামে-বেনামে অভিযোগ জমা দিবেন। একমাস পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সামনে উপস্থাপন করে অভিযোগগুলো সুরাহা করতে হবে।’
ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, কোটা আন্দোলনকে বিএনপি, শিবির কর্তৃক পরিচালিত আন্দোলন মনে করে দমনের চেষ্টা করা হলে সেটি ভুল হবে। এটিও সত্য যে এ আন্দোলনে শত্রুপক্ষ ঢুকে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। যার একটি উদাহরণ ঢাবি উপাচার্যের বাড়িতে আক্রমণ। ভিসিও বলেছেন- আক্রমণকারীরা বহিরাতগত। যাদের আটক করা হয়েছে তারাও বহিরাগত।
তিনি আরও বলেন, ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’চাপিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাষ্ট্র বা কোনো বাহিনী নির্যাতন করলে আমরা বরদাস্ত করবো না। আমরা বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাস চলবো আমরা শিক্ষক-ছাত্র ন্যায়ের পক্ষে।
কোটা বিষয়ে এম এম আকাশ বলেন, বিশেষ সুবিধা হবে অল্প লোকদের জন্য তাও অল্প সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। মেরিটের ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এ দাবি ন্যায্য। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও মেধার ভিত্তিতে প্রশাসন গড়ার পেছনে অগ্রসর হয়েছে।‘শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি মনে করি মু্ক্তিযোদ্ধারা কোটার জন্য যুদ্ধ করেননি।
সভায় শামসুজ্জোহা বলে খ্যাত অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, দলীয় চিন্তা-চেতনার উর্ধবে এসে ছেলেরা আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আজ অধিকার ছিনিয়ে আনতে পেরেছে। তবে এটা শুরু মাত্র। আরো অনেক সমস্যা এই ছাত্রসমাজকেই সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের যে জায়গায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হচ্ছে তা হল দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরিগুলোতে। যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পাশ স্নাতকও এখন এই চাকুরীগুলোতে আবেদন করছে তাই সেখানেও শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হোক।
তিনি দাবি করেন, এই আন্দোলনে বাংলাদেশের কোথাও একটি গাড়িও ভাংচুর হয়নি, একটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়নি। এতো সহনশীল আন্দোলন বাংলাদেশ এর আগে প্রত্যক্ষ করেনি।
ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এখনো শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে কেন শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়হীনতায় ভূগতে হবে? সবাইকে সাহসী হতে হবে। কেননা তোমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছো।’ এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের করার দাবি জানান তিনি।
আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুন,যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, নূরুল হক নূর, ফারুক হোসেন প্রমুখ।
এ সময় তারা শিক্ষাথীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, অজ্ঞাতনামায় মামলা প্রত্যাহার করা, দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রশাসনকে সহায়তা করা এবং হলে হলে কোন ছাত্রসংগঠন দ্বারা সাধারণ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন না চালানোর দাবি জানান।
দৈনিকদেশজনতা/ এন আর/ টি এইচ