আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অব্যাহত প্রভাব বিস্তার নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। তেহরানের এই প্রভাব ঠেকাতে এক সাথে কাজ করার কথাও জানিয়েছে ওয়াশিংটন ও তেলআবিব। আর হুমকি-ধমকি দিয়ে ইরানকে থামাতে না পেরে এখন পরমাণু চুক্তি বাতিলের কথা বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ইরানও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরমাণু চুক্তি নিয়ে আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই।
ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি তথা তেহরানের অগ্রগতি থামাতে তিন দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তার এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানবিরোধী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা। এরই অংশ হিসেবে শনিবার ইরানের সবচেয়ে কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী (এই মুহূর্তে) সৌদি আরব পৌঁছেন তিনি। সেখানে প্রভাবশালী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পম্পেও।
এরপর গতকাল রোববার ইরানের চির প্রতিদ্বিন্দ্বী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই মূলত তারা ইরানের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পম্পেও বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরাইলসহ অত্র অঞ্চলের জন্য ইরানের অব্যাহত হমুকি বৃদ্ধি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের আধিপত্য করার উচ্চাঙ্খায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।’ তেলআবিবে নেতানিয়াহুর সঙ্গে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টার বৈঠকে পম্পেও আরো বলেন, যদি ইরানকে থামানো সম্ভব না হয়, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার করবেন। তাছাড়া তেহরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না সে ব্যাপারে আগামী ১২ মে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বরাবরই ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি বাতিল কিংবা আরে শর্তারোপ করে নতুনভাবে করার কথা বলে আসছেন। যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ শক্তিধর রাষ্ট্র বলছে, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত রাখতে এই চুক্তিই যথেষ্ট। নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরান একের পর এক দেশকে কব্জা করছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আকাঙ্খা অবশ্যই থামাতে হবে। এক কথা তেহরানের আগ্রাসন বন্ধ করতেই হবে।’
এদিকে, একই দিন (রোববার) ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনকে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘পরমাণু চুক্তি কিংবা তার আদলে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।’ ইরান তার প্রতিশ্রুতির বাইরে নতুন কোনো সীমাবদ্ধতা (বিধি-নিষেধ) মেনে নেবে না বলেও জানিয়ে দেন ইরানি প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি বলেছে, তারা ২০১৫ সালে করা এই চুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর তেহরানকে পরমাণু বোমা বানানো থেকে বিরত রাখতে এই চুক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প- চুক্তিটি হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে- এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলো বলছে, বর্তমান চুক্তিটি অনেক দুর্বল। তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত রাখতে হলে আরো শর্ত যোগ করে নতুন চুক্তি করতে হবে।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন বলেছেন, ইরানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভাবছেন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘পরমাণু চুক্তিতে ওয়াশিংটন থাকবে কি না তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হননি ট্রাম্প।’ তেলআবিব সফর শেষে জর্ডান গেছেন পম্পেও। সেখানে দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার ওয়াশিংটন ফিরে তার প্রথম কূটনৈতিক সফর শেষ করবেন তিনি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি