২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৫৯

চা-বাগান চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতি দুই বছর অন্তর চুক্তি করে মালিকদের সংগঠন চা-সংসদ। প্রতি চুক্তিতেই শ্রমিকদের মজুরিসহ সু্যোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। চুক্তির মাধ্যমেই আগামী দু’বছরের জন্য নির্ধারিত হয় শ্রমিকদের বেতন, মজুরি, বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বিগত ১৫ মাস ধরে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তি দিয়ে বেতন দেয়া হচ্ছে। ফলে ঠকছেন নিম্ন আয়ের এসব শ্রমিকরা।

আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতারা জানান, ২০১৫ সালে চা-শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সর্বশেষ চুক্তি করে মালিক পক্ষ। এতে ১৬ টাকা দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৮৫ টাকা নির্ধারিত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর কেটে গেছে আরও ১৫ মাস ২৫ দিন। তবে এখনও চা-শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি মালিকপক্ষ। এতে করে বেতন ভাতা বাড়ানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র চা-শ্রমিকরা।

এসব সমাবেশ থেকে তারা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩০ টাকায় উত্তীর্ণ, শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের চুক্তি নবায়ন ও যথাসময়ে চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবি জানান। এছাড়া আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে শনিবার থেকে দেশের সকল চা-বাগানে টানা কর্মবিরতিরও হুমকি দেন শ্রমিকরা।

এদিকে চা-বাগান মালিকরা বলছেন, চা-শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সামনে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন। তাই মাঠ গরম করার জন্য তারা অযথা আন্দোলনে নেমেছে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য।

এ বিষয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, মালিকপক্ষ সবসময়ই শ্রমিকদের বেতন না বাড়ানোর জন্য চুক্তি নবায়নে গড়িমসি করে। ২০১৫ সালে তারা ৬ বছর পর চুক্তি করেছিলেন। এবারও সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তিনি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩০ টাকা নির্ধারণ, চুক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়া ২০১৭ সালের জানুয়ারি নতুন চুক্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১১৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে বকেয়া মজুরি প্রদান এবং দ্রুত চুক্তি নবায়নের দাবি জানান। অন্যথায় আগামী শনিবার থেকে দেশের সব বাগানে টানা কর্মবিরতি পালনের হুমকি দেন এ শ্রমিক নেতা।

তবে চা বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদের সহ-সভাপতি শাহ আলম বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তির খসড়া প্রস্তুত আছে। তারা চাইলে যেকোনো সময় চুক্তি নবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্দোলনে নেমেছে। এছাড়া আগামী জুনে তাদের নির্বাচন। এজন্যও মাঠ গরম করতে চাইছে।

সিলেট নগরের পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া চা-বাগান। বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে জড়ো হন বাগানের কারখানার সামনে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

মালনীছড়া চা-বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিতেন সবর বলেন, চা শ্রমিকরা সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করেন। তারপরও যথাসময়ে তাদের মজুরি বৃদ্ধিতে মালিকপক্ষ অযথাই কালক্ষেপণ করে। এই বাজারে ৮৫ টাকা মজুরিতে কারো পক্ষেই চলা সম্ভব নয়।

জিতেন বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের চুক্তি নবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। তবে গত দেড় বছরের বকেয়া পরিশোধ করতে চাচ্ছে না। এটি না মানলে আমাদের আন্দোলন চলবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ২৬, ২০১৮ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ