আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহের উত্তরে কৌশলগত শাক্সাম উপত্যকায় সড়ক নির্মাণ করে ফেলল চীন। যা অত্যন্ত কঠিন কাজ বলেই মনে করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সম্প্রতি শাক্সাম উপত্যকায় নতুন সড়ক ও সামরিক পোস্ট নির্মাণের সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য প্রিন্ট। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গিয়েছে, ভারত-ভুটান-চীনের ত্রিদেশীয় সংযোগ পয়েন্ট ডোকালামকে ঘিরে ২০১৭ সালের জুনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পর শাক্সাম উপত্যকায় সড়ক নির্মাণের কাজ করে চীন। সাউথ ব্লক এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং যা নিয়ে গোয়েন্দা বিশ্লেষণও করার নির্দেশ দিয়েছে। কী ধরণের সামরিক উদ্দেশ্য নিয়ে চীন এই সড়ক নির্মাণ করে থাকতে পারে, তা জানতেই এই বিশ্লেষণ।
সংবাদ প্রকাশের আগে সিয়াচেন হিমবাহের কাছে ওই সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো ধারণাই ছিল না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শাক্সাম উপত্যকার অবস্থান সিয়াচেনের সবচেয়ে উত্তরের ৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। খুবই সংকীর্ণ উপত্যকা এবং এটা একটা গিরিখাত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশ্বাস ছিল যে, ওই প্রতিকূল ভূপ্রকৃতির মধ্যে ওই উপত্যকা দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা কার্যত অসম্ভব। উপত্যকার ভিতর দিয়ে বড়জোর জিপ চলার মতো একটা রাস্তা বানানো যেতে পারে। কিন্তু হাইওয়ে বানানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই ভারতীয় সেনাবাহিনী মনে করেছিল, শেখানে হুমকির কিছু নেই।
জানা গেছে, এইসব নতুন পোস্ট এবং শাক্সাম উপত্যকার সড়কটি এই মুহূর্তে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ তৈরি হয়ে গেছে। এই সড়কের কারণে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের দিকে যাওয়ার আরো একটি পথ খুলে গেল চীনের। যদিও এরপরও ভারতের সেনাবাহিনীর জন্য তা সরাসরি হুমকি নয়, কারণ সিয়াচেন হিমবাহ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেটা পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র। তবে এই নির্মাণ কাজকে উস্কানি হিসেবে দেখতে পারে ভারত।
সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন, এই অঞ্চলটা চীনের কাছে ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। এটা জম্মু-কাশ্মীরের অংশ। এটা সিয়াচেনের একেবারে উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত এবং বাস্তবে এই এলাকায় ঘটার মতো তেমন কিছু এখনও ঘটেনি।
স্যাটেলাইট ছবি এবং টহল দলের সূত্রে ওখানকার সড়ক সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন হয়তো কারাকোরাম হাইওয়ের দিক বদলেছে। সেক্ষেত্রে এটা সিয়াচেন এবং দৌলত বেগ ওলডি সেক্টরে ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। দ্য প্রিন্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নতুন সড়কটি শাক্সাম নদীর উত্তর প্রান্তের সমান্তরালে তৈরি করা হয়েছে। কমপ্রেসড আর্থ কৌশল কাজে লাগিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে যেটা করেছে চীন।
সেইসঙ্গে ওই এলাকায় সড়কের মধ্যে সংযোগের জন্য বেশ কিছু ব্রিজও নির্মাণ করতে হয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজে এটাও দেখা গিয়েছে যে, নতুন সড়কটি শাক্সাম উপত্যকার বাইরে দু’টি চীনা সামরিক চেকপোস্টের সঙ্গে সংযুক্ত। উপত্যকায় কমপক্ষে দু’টি সামরিক পোস্টের অবস্থান দেখা গিয়েছে। একটির চারদিকে ডাবল কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। এবং এই তারের বেড়া নদী পর্যন্ত চলে গেছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি