মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিনা অপরাধে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো। আমি আবারও সব রাজনৈতিক দল, ধর্ম, বর্ণ, ব্যক্তি সবাইকে গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারকে জানাতে চাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ১০ থেকে বিএনপি এবং দলের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজ মানববন্ধনে পুলিশের আচরণ আপনারা দেখেছেন। কী রকম আচরণ তারা আমাদের সঙ্গে করছেন। তাই দলের নেতাকর্মীদের বলবো, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের একমাত্র আহ্বান, আসুন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে, গণতন্ত্রকে, মানুষের অধিকারকে মুক্ত করি। সরকার নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচন করতে হলে প্রথমে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। তাহলে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে প্রতিদিনই বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বাড়ছে। প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। গতকাল তাঁর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। তখন আমরা জানতে পেরেছি বেগম খালেদা জিয়া এতোই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে দ্বিতীয়তলা থেকে নিচতলায় নামতে পারেননি। আমরা বারবার বলছি, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হোক। বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁর যে ধরনের পরীক্ষা বা এমআরআই করা দরকার তা অন্য হাসপাতালে করা সম্ভব নয়। একমাত্র ইউনাইটেড হাসপাতালে এর ব্যবস্থা আছে। তাঁর দুই হাঁটুতে মেটাল প্রতিস্থাপন করা আছে। সে কারণ অন্য কোথাও তাঁর এমআরআই করানো সম্ভব না।
তিনি বলেন, এতবার বলার পরও বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। তাঁর পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপরও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
ফখরুল বলেন, আমরা জানি সরকার কেন বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে তারা আতঙ্কিত। যদি তিনি বাইরে থাকেন, তাহলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে পারবে না সরকার। তাদের পরাজয় হবে অবশ্যম্ভাবী।
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার অবৈধ। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার পর প্রথমে ডিভিশন না দিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। একটি জামিনযোগ্য মিথ্যা মামলায় তাঁকে কূটকৌশলে জামিন দিচ্ছে না। সরকার তাঁকে এবং বিএনপিকে বাইরে রেখে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি পাতানো নির্বাচনী খেলা খেলতে চায়। সেই খেলা তারা আর খেলতে পারবে না। জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা শুধু সুযোগ পেলে ভোটের মাধ্যমে এর সমুচিৎ জবাব দেবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহাজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নাল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুল হাই, হাবিবুর রহমান হাবিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সফু, কামরুজ্জামান রতন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, রিয়াজ উদ্দিন নসু, রফিক সিকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির হাবিবুর রশিদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী প্রমুখ।
এছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল ও ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট ও থানার নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির মানববন্ধন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। এ সময় নয়াপল্টন এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ/ টি এইচ