নাহিদ হোসেন, নাটোর প্রতিনিধি :
শষ্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলের নাটোর জেলা অংশে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এদিকে বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চলনবিলের কৃষকরা। চলনবিলের সিংড়া এলাকার চাষীরা দু দফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠেছেন ভুট্টা চাষ করে ।
চলতি মৌসুমে উপজেলার ডাহিয়া,ইটালি,তাজপুর,শেরকোল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে প্রফেট,এসকে ৪০,প্যাসিফিক,মুকুট,এলিট,সুপার ফাইন জাতের ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। এছাড়াও চৌগ্রাম,হাতিয়ানদহ,চামারী ও লালোর ইউনিয়নে তুলনামূলক ভাবে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। বিঘা প্রতি ৩৮-৪০মন ভুট্টার ফলন পাওয়া যাচ্ছে। চলনবিলে উৎপাদিত এসব ভুট্টা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। তবে এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় অনেক কৃষক ভুট্টার আবাদ করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় ভুট্টার আবাদ কম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ৮শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। গত বছর ১হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছিল।
জানা যায়, শস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের সিংড়া উপজেলার কৃষকরা বোরো ধানের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টা আবাদ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভুট্টা আবাদের উপর তেমন প্রভাব পরে না এবং সার তেল সহ অন্যান্য খরচ কম হওয়ার কারণে ভুট্টা চাষে কৃষকরা দিনদিন ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত বছর আগাম বন্যায় ফসলের কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল কৃষকরা। কিন্তু বাম্পার ফলন ও কাঙ্খিত বাজার মূল্য পাওয়ায় সেই ক্ষতি কৃষকদের পুষিয়ে গিয়েছিল। এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় অনেক কৃষক ভুট্টার আবাদ করতে পারেনি। উপজেলার ৮শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এবারও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে কাঁচাভেজা ভুট্টা প্রতি মণ ৫১০ টাকা থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো ভুট্টা প্রতি মণ ৭৮০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একেবারে শুকনো ভুট্টা প্রতি মন ৯০০-১০০০ টাকা দরেরও বিক্রি হচ্ছে। এতে গতবারের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। গত বছর কাঁচাভেজা ভুট্টা প্রতি মণ ৪২০ টাকা থেকে ৫শ টাকা ও শুকনো ভুট্টা প্রতি মণ ৬৫০ টাকা থেকে ৭শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের দুড়মল্লিকা গ্রামের ভুট্টা চাষী মহাজুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর প্রায় ৪০বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করি । এ বছর ভুট্টার ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে কাঁচা ভেজা প্রতি মণ ভুট্টা ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রয় করছি । প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদে তেল,কীটনাশক সহ প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের জার্মান জানান, গত বছরের মত এবার ভালো ফলন হয়েছে,বাজার দরও ভালো। তিনি আরো জানান, ৫বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৭থেকে সাড়ে ৯হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বিঘা প্রতি প্রায় ৩৫ থেকে ৪০মন হারে ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করায় আবাদ করতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি বলে জানান।
উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের দুড়মল্লিকা মাঠে পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুরুদাসপুর থেকে ভুট্টা কিনতে আসা ভ্রাম্যমান ভুট্টা ব্যবসায়ী নিপন তালুকদার বলেন, এই এলাকায় ভালো মানের ভুট্টা পাওয়া যায়। এখান থেকে ভুট্টা কিনে ঢাকা,ইশ্বরদী,পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন মিলে সরবরাহ করে থাকি। এবার কাঁচাভেজা ভুট্টা প্রতি মণ ৫১০ টাকা থেকে ৫২০ টাকা ও শুকনো ভুট্টা প্রতি মণ ৭৮০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা এবং একেবারে শুকনো ভুট্টা প্রতি মন ৯০০-১০০০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, চলনবিলের মাটি উর্বর এখানকার কৃষকরা যাতে সব ধরনের ফসল ফলাতে আগ্রহী হয়ে উঠে সেজন্য উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষনিক সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য এ অঞ্চলের কৃষকদের পাশে আছে। এবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৮শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ভুট্টার ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ মণ থেকে ৪০ মণ। বিগত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ভুট্টার ফলন ও দাম ভালো। আগামীতে কৃষকরা ভুট্টার আবাদে আরও উৎসাহী হবে। এ বছর বন্যার পানি সময়মত নামতে না পারায় অনেক কৃষকের ভুট্টা আবাদ করতে পারেননি। তারা ধানের আবাদ করেছেন। তবে এ বছর ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে,দামও ভালো আছে। আগামী মৌসুমে ভুট্টার আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ