ঢাবি প্রতিবেদক:
বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের সার্বিক পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল কর্তৃপক্ষ হলের টিভি কক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্টসহ আবাসিক শিক্ষকবৃন্দের ব্যাপারে তাদের অভিভাবক সুলভ দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
মতবিনিময়ের শুরুতে হল প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে চাইলে হলে অবস্থান কারী ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, আমি চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী, যে আন্দোলনে ইতোমধ্যে আমাদের সকল সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এর সমাধান দিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে এরপরেও কেন আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আমাকে রুমে ঢুকতে দেয়া হবে না? এখন আপনারা যারা আমাদের অভিভাবক দাবী করেন, তারা কি দায়িত্ব পালন করেছেন?
মশিউর আরো বলেন, আমি পুলিশ বা ছাত্রলীগ কাউকে ভয় পাই না। কিন্তু আমাকে যে কোন সময় গুম বা হত্যা করা হতে পারে, আমি এ আতঙ্কে আছি। আমার কিছু হলে এর জন্য আমার হলের প্রভোস্ট স্যার দায়ী থাকবেন, কারণ তিনিই এখানে আমাদের অভিভাবক। তাঁরই দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
তিনি আরো বলেন, আমি এখানে পড়াশুনা করতে এসেছি। আমার উপর অন্য শিক্ষার্থীরা কেন খবরদারি করবে? আমাকে কেন গেস্ট রুম করতে হবে? আমরা হল প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাই।
এ সময় হলের আরেকজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন আপানারা কিভাবে আমাদের অভিভাবক ? আপনাদের অনেককে তো আমরা ঠিক ভাবে চিনিই না। হলে নিয়মিত পানি থাকে না, টয়লেট গুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, ক্যান্টিনে খাবার মান ভাল না আপনারা কি কখনো এ সব বিষয়ে আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন? আপনারা কেমন অভিভাবক? বিশ্ববিদ্যালয় তো ঠিকই আমাদের দেখা শুনার জন্য আপনাদের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়।
মতবিনিময় সভায় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সাদ্দাম হোসেন, সাইদুর রহমান , গোলাম সরওয়ার, হাফিজ সহ আরো অনেকে কথা বলেন…। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা যারা সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে জেলে গিয়েছি আপনারা অভিভাবক হিসেবে আমাদের কেন খোঁজ নেন নি? পুলিশি হামলায় হলের আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ আপনারা নেন নি কেন?
তারা আরো বলেন, আমরা চাই ১ম বর্ষ থেকেই হল প্রশাসনের মাধ্যমে হলে থাকব, কোন রাজনৈতিক নেতার ছত্র-ছায়ায় নয়। আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়েও কেন আমাদের জন্য বরাদ্ধকৃত রুমে উঠতে পারব না? আমরা রাজনীতি করব কি করবনা বা কোন দল করব সেটা আমাদের ইচ্ছা। আমাদের কেন বাধ্য করা হবে? আমরা যদি দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বিরোধী কোন অপরাধ করি সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু কোন ছাত্রনেতা কেন আমাদের উপর শারিরিক বা মানসিক নির্যাতন করবে? এর থেকে পরিত্রান পেতে আমরা হল কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ঘোষণা চাই। প্রয়োজনে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা তাদের মাধ্যমে আমাদের অসুবিধার কথা স্যারদের জানাতে পারব।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার দাঁড়ি আছে এজন্য আমাকে শিবির বলে সন্দেহ করা হয়, এরকম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর তথাকথিত ছাত্র নেতারা নির্যাতন করে থাকে ।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা হলের মেস নেক্সাস ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কথাও বলেন। অভিযোগ যে, সেখানে একজন শিক্ষকের মদদে নিয়ম ভঙ্গ করে মুহিব নামে একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ দিন ধরে অডিটরের পদ দখল করে আছে। এবং সে হলের ৪৬০ নং রুম অবৈধ ভাবে থাকে । যে ছাত্রের নামে বরাদ্দ সে তাকে ঐ রুমে ঊঠতে দিচ্ছে না। এসব বিষয়ে যারা কথা বলতে চায় ,তাদেরকে মেসের সদস্যপদ বাতিল বা হল থেকে বের করে দিবেন বলে ঐ শিক্ষক বিভিন্ন সময় হুমকি দেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
একই সাথে শিক্ষার্থীরা হল মসজিদের অবৈধ অযোগ্য ইমাম কে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ তোলার সময় হল রুম মুহুর্মুহু করতালিতে ভরে উঠে ।
সমাপনি বক্তৃতায় হল প্রভোস্ট সমস্যাগুলোর কথা স্বীকার করে সেগুলো সমাধান করার এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন,আমরা এখানে প্রায় ৪৫ টি অভিযোগ চিহ্নিত করেছি, পর্যায় ক্রমে এগুলির সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
অবশ্য রাতে কিছু শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন যে, মতবিনিময়ের পরে সেখানে যারা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের অনেকে নাকি তাদের তালিকা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি হল প্রশাসনের কথাকে উপেক্ষা করে শওকত নামে এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। অথচ তিনি (আবিদ আল হাসান) নিজেই হলে একজন অবৈধ শিক্ষার্থী।
অবশ্য পরে গণমাধ্যম কর্মী ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা হল প্রশাসনকে জানালে ঐ শিক্ষার্থীকে আর বের করতে পারে নি।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে দেখা যাচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর