স্বাস্থ্য ডেস্ক:
দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। নারীর পুষ্টিহীনতার চিত্র আরো ভয়াবহ। পুষ্টিহীন মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী। শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণও অপুষ্টি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমাদের দেশে খাদ্য উত্পাদন বাড়লেও পুষ্টি পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জাতিসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’-(এফএও), খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে ‘ফুড সিকিউরিটি নিউট্রিশনাল সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম (এফএসএনএসপি) এর গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অন কাভারেজ অব বেসিক সোশ্যাল সার্ভিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে— বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং খাদ্যনিরাপত্তায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে দেশের সার্বিক পুষ্টিচিত্র সন্তোষজনক নয়। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু, কিশোরী ও নারী এখনো অপুষ্টিতে ভুগছে। ফলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বতা ২৭ শতাংশ কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুরা এখনও উচ্চমাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। এসব শিশুর মধ্যে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ খর্বতা, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কৃশতা এবং ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ কম ওজনসম্পন্ন। প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুরা ভিটামিন-এ ও জিংকের অভাব, নারীরা আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছে। শহরের বস্তি অঞ্চলে পুষ্টি পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং গ্রামের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ। বস্তির অর্ধেক শিশু খর্বকায়। খর্বতা যে হারে হ্রাস পাচ্ছে, তার গতি অত্যন্ত ধীর। দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে এবং সচেতনতা বাড়াতে চলছে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০১৮। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এ বছর পুষ্টি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— ‘খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন’।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে প্রতিবছর দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়। উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি একটি অন্যতম বাধা। অপুষ্টির কারণে শিশুরা অসুখ-বিসুখে বেশি ভোগে। এতে তাদের জন্য পরিবার ও সরকারের খরচ বেড়ে যায়। পুষ্টিহীনতা দূর করতে মায়ের অন্তঃসত্ত্বার সময় থেকে শিশুর দুই বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট খাদ্য নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে। কারণ বস্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি।
এ কারণে পরিবারকে আগে থেকেই সঞ্চয়ী হতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবেই বস্তিতে শিশুদের পুষ্টিচিত্রের উন্নতি হবে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের তথ্য মতে, দেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ বেড়েছে। সামাজিকভাবে নারীর প্রতি বৈষম্য দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেও নারী ও কন্যা শিশুরা চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টি পায় না।
এফএসএনএসপি-এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী, অপুষ্টির কারণে দেশে বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতি কিশোরীর সংখ্যা ৩২ শতাংশ আর খর্বাকৃতি নারীর সংখ্যা ৪২ শতাংশ। খাদ্যে কম পুষ্টি উপাদান গ্রহণকারী নারীর হার ৬০ শতাংশ, দীর্ঘমেয়াদে শক্তির ঘাটতি আছে এমন নারীর হার ২৫ শতাংশ। এছাড়া দেশের ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, পুষ্টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নারী ও শিশুদের পুষ্টিপরিস্থিতির উন্নতি হবে। শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে মাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। মায়ের যত্ন নিতে হবে। সেই পুষ্টিই পরবর্তী প্রজন্মের কাজে লাগবে।
দৈনিকদেশজনতা / আই সি