ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
আজ ঠাকুরগাঁও জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী ও এদেশীয় দোসররা সদর উপজেলার ১৫টি গ্রামে তিন হাজারেরও বেশি নিরীহ বাঙালিকে জাঠিভাঙ্গায় জড়ো করে হত্যা করেছিল।
সেই গণহত্যায় আত্মদানকারীদের স্ত্রীরা বেঁচে আছেন অর্ধাহারে-অনাহারে। তাদের খবর নেওয়ার কেউ নেই। দিনটিকে স্মরণেও নেই সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের কোনো কর্মসূচি।
১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, জগন্নাখপুর, শুকানপুখুরীসহ ১৫টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জাঠিভাঙ্গা এলাকায় তাদের পথরোধ করে এ দেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা। পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে পাকসেনাদের খবর দেয় স্থানীয় রাজাকাররা। নিরীহ এই বাঙালিদের লাইনে দাঁড় করিয়ে পাকহানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের লাশ পাশের পাথরাজ নদীর তীরে ফেলে সামান্য মাটি চাপা দেয় তারা। একদিনেই বিধবা হয় প্রায় সাড়ে ৩শ’ নারী।
সেই গণহত্যায় আত্মদানকারী পরিবারের তিন শতাধিক বিধবা বেঁচে আছেন খেয়ে না খেয়ে। প্রিয়তম স্বামী হারানোর বেদনা আর অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার যন্ত্রণা বয়ে তারা পার করেছে দীর্ঘ ৪৭টি বছর।
এখনো পায়নি তাদের স্বামী হত্যার বিচার, এখনো মিলেনি স্বীকৃতি। এই কান্না বুকের মধ্যে চেপে রেখে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জীবনের দুঃসহ বোঝাকে। কেউ ভিক্ষে করে, কেউ বা দিন মজুরের কাজ করে নিজের জীবনটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পরলেও আজো অনেকেই বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের তিরপা মোহন গণহত্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নানা রোগে ভোগে বিছানায় পড়ে আছেন। প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করতে পা পেরে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
জগন্নাথপুরের আশামনি বেওয়া ও জাঠিভাঙ্গা বুড়াশিব গ্রামের ভুটরী বেওয়া অভিযোগ করে বলেন, একটি বিধবা ভাতার কার্ডে তিন মাস পরপর পাই মাত্র ৯শ’ টাকা। এ দিয়ে কি সংসার চলে? আর শীতের মৌসুম এলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাই একটি কম্বল। সারা বছর আর কেউ কোনো খবর রাখে না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বামী হারা বিধবা ও স্বজন হারা মানুষগুলো আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা।
এই পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক- সরকারের কাছে এ অনুরোধ জানান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আকতারুজ্জামান জানান, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় জাঠিভাঙ্গা গণহত্যার শহীদের পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ সুবিধার বিষয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবেন।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ