নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে যেন প্রতিহিংসার আগুন। তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন’ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল লন্ডনে এক দলীয় সভায় বলেছেন যেভাবেই হোক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। তাকে ফেরত নেওয়ার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যেভাবেই হোক তাকে দেশে ফেরত নেবো এবং বিচারের মুখোমুখি করব।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য চরম ক্রোধ ও হিংসার বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে যেন প্রতিহিংসার আগুণ অনির্বাণ। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জালনথি তৈরি করে মিথ্যা সাজানো মামলায় হুকুমের রায় দিয়ে বন্দী করেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার ঝাল মেটেনি। আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলেনে তিনি এসব বলেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে মরিয়া। এ পরিবারটিকে ধ্বংস করতে পারলে তাঁর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ পূর্ণ হয়। কিন্তু কারো কী চিরকালীন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার অভিলাষ পূরণ হয়? এই জিঘাংসা একটি প্রতিবন্ধী সরকারেরই লক্ষণ। কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, গতকাল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে গত এক বছরের গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা, খেয়াল খুশি মতো আটক করে নির্যাতন করা, বেআইনিভাবে আটক করে রাখা, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
তাই বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সরকারের অনাচারের বিরুদ্ধে যে আওয়াজ উঠেছে সেটিকে আড়াল করতেই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে টার্গেট করা হয়েছে। তাঁকে লক্ষ্য করে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিংসাত্মক আক্রমণ করছেন কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দুঃশাসনের খবর বিশ্ববাসী জানে। ওইসব দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল।
প্রতিহিংসার জ্বালা মেটাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হাতে পাওয়ার জন্য ছটফট করছেন। হাতে পেলে তিনি দেখিয়ে দিতেন তাঁর বীভৎস প্রতিশোধের ভয়াবহতা কত ভয়ঙ্কর। এজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কারানির্যাতনের মধ্যে রেখে এখন তাঁর পুত্র জনাব তারেক রহমানকে হাতের মুঠোয় আনতে প্রধানমন্ত্রী ছুটছেন দিশেহারা আর দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে। তবে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। জনগণের শক্তির কাছে কোন দু:শাসনই টেকে না। প্রতিবাদী চেহারা নিয়ে সংগ্রামী মানুষ রাস্তায় নামছে। বিদেশী প্রভুর ওপর নির্ভর করা সরকার জনগণের শক্তির কাছে পরাজিত হবেই।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ভারত কখনো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হস্তক্ষেপ করে না। ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই-২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা কী মানুষ ভুলে গেছে। কিভাবে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে ধমক দিয়েছিল যা গণমাধ্যমের কাছে এরশাদ স্বীকার করেছিলেন, সেটাও কি মানুষ ভূলে গেছে?
সুতরাং যতই ছুটাছুটি করেন না কেনো ৫ জানুয়ারী মার্কা নির্বাচন এদেশে আর হবে না। ধূর্তামি আর শঠতা দিয়ে একতরফা নির্বাচন করতে পারবেন না। জনগণ তাদের ভোটর অধিকার ফিরে পেতে যে আন্দোলন করছে সে আন্দোলনের স্রোতে স্বৈরাচারীর বাঁধ ভেঙ্গে এখন ধেয়ে আসছে তাদের পরাজিত করতে।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার নড়াইলের কালিয়ায় বিএনপির কর্মীসভা শুরু হলে সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কবির মুরাদ এবং বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ নেতাকর্মীদেরকে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখার একপর্যায়ে সেখান থেকে কবির মুরাদ এবং অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৫৯ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মাত্র কয়েকদিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু সরকার আবারও তাকে কারারুদ্ধ করে নিজেদের কুৎসিত স্বৈরাচারী চেহারাটি জনগণের কাছে উন্মোচন করলো।
এছাড়াও ওইদিনই স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলে মিছিল থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম এবং মহানগর নেতা কামাল উদ্দিন কালুসহ ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি দলের পক্ষ থেকে জনাব কবির মুরাদ ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৫৯ জন নেতাকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও মহানগর নেতা কামাল উদ্দিন কালুসহ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ