নওগাঁ প্রতিনিধি :
নওগাঁর রাণীনগর ও পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা। এই দুই উপজেলার সীমানায় অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিল ‘রক্তদহ বিল’। এই রক্তদহ বিলের প্রধান শাখা খালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মিত অপরিকল্পিত দুইটি ক্রসড্যামের কারণে এ বছরও তলিয়ে যাচ্ছে বিলের মধ্যে রোপণ করা প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা-আধা পাকা ইরি-বোরো ধান।
ধান তলিয়ে যাওয়ার এই অবস্থা আরো চরম আকার ধারণ করেছে দুইটি ক্রসড্রাম নির্মাণের পর থেকে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও কোনো লাভ হয়নি। তাই কষ্টের সোনালী ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষকরা এখন তাদের ধান পুরোটাই ঘরে উঠাতে পারবে কি না এই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি কয়েকটি শাখা খাল দিয়ে এসে জমা হয়েছে রক্তদহ বিলে। কিন্তু বিলে জমা হওয়া পানি আত্রাই নদীতে যেতে পারছে না নিষ্কাশন পথের রাণীনগর উপজেলা অংশে শাখা খালে দুইটি স্থানে ক্রসড্যাম থাকার কারণে।
বৃষ্টির পানি ধরে রেখে আপদকালীন সময়ে সেচ দেয়ার জন্য ২০১৪ সালে রক্তদহ বিলের উজানে সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের পাশে এবং ভাটির দিকে রাণীনগর উপজেলায় তিলাবুদু ও আকনা বাঁশবাড়িয়া নামক দুই স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ক্রসড্যাম নির্মাণ করে নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এতে করে ইরি-বোরো আবাদ মৌসুমের শেষ দিকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। গত কয়েক দিনে জেলার রাণীনগর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। সেই বর্ষণের পানি উজান থেকে নেমে বিভিন্ন খাল দিয়ে জমতে থাকে রক্তদহ বিল ও বিলের চারপাশের ইরি-বোরো আবাদি মাঠে।
কিন্তু পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারছে না। এর কারণে রক্তদহ বিলের রাণীনগর উপজেলার বোদলা, পালসা, তেবাড়িয়া, বিশিয়া এবং আদমদীঘি উপজেলা সদর ইউনিয়নের করজবাড়ি, দক্ষিণ গনিপুর, কদমা, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, দমদমা, কাশিপুর, ছাতনি, ঢেকড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা আধাপাকা ইরি-বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে হুমকির মুখের পড়েছে।
বোদলা, পালশা, তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক হুরমত আলী, ইয়াকুব আলীসহ কয়েকজন জানান, অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণেই গত চার বছর ধরে আমাদের এই সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা আদমদীঘি ও রাণীনগর উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, রক্তদহ বিলের ভাটিতে বরেন্দ্র প্রকল্পের অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারনে জলাবদ্ধতায় উঠতি ইরি-বোরো ধান জলমগ্ন হয়ে হুমকির মুখে পড়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, ক্রসড্রামের কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ক্রসড্রামের আরএল বিল এলাকার আরএল এর সমান।
তিনি আরো বলেন, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি, স্লুইচগেটের সমস্যা এবং কচুরিপানার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ