খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মাসিক আয় নির্বাচনী হলফনামার তথ্য অনুসারে ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকসহ দলটির নেতারা জানতে চেয়েছেন, মঞ্জু চলেন কীভাবে? মঞ্জু বলেন, তাঁর পরিবারের ব্যয় চলে শ্বশুরবাড়ির টাকায়। মেয়ে টিউশনি করে নিজের খরচে পড়াশোনা করছেন।
আয় নিয়ে দুই মেয়র প্রার্থীর বাগ্যুদ্ধ খুলনাবাসীর মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাসায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর এ শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তি। মূলত, আমার শ্বশুরবাড়ি থেকেই আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া এবং পরিবারের খরচের সিংহভাগ আসে। এটা অনেকেই জানে।’ মঞ্জু আরও বলেন, তাঁর মেয়ে ঢাকায় আইন পড়ছেন। তিনি চারটি টিউশনি করে নিজের খরচ চালান। নিজের সম্পদ প্রসঙ্গে মঞ্জুর দাবি, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কোনো সম্পদ গড়েননি।
তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে বিয়ের সময়কার দুটি খাট এবং উপহার হিসেবে পাওয়া একটি টিভি এখনো আছে। শ্যালক একটি ফ্রিজ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। স্ত্রী চাকরি করার সময় এক সেট সোফা কিনেছেন, সেটাও অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। কিস্তিতে ১০–১২ বছর আগে একটি এসি কেনার কথা জানালেন সাবেক এ সাংসদ। হলফনামায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আয়ের উৎস বাড়িভাড়া। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আর ব্যয় ছিল ১ লাখ টাকা। ওই নির্বাচনের সময় তাঁর আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা। এবার হলফনামায় ব্যবসা বন্ধ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নয় বছরে সব ব্যবসাই বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
মঞ্জুর সম্পদের মধ্যে রয়েছে একটি টয়োটা জিপ, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ। আসবাবপত্রের মধ্যে দুটি সোফাসেট ও দুটি আলমারি রয়েছে। স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। যৌথ মালিকানায় চারতলা ভবন রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর কাছে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৮৯০ ডলার এবং স্ত্রীর কাছে আছে নগদ ২ লাখ টাকা ও ১৭ হাজার ৪৫৪ ডলার।
আয়ের তথ্য নিয়ে খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের বাগ্যুদ্ধ শুরু হয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরের দিন থেকে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন কোনো অভিযোগ না করলেও পরদিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ওই দিন রাতেই গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। একই বিষয় নিয়ে পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। আবার বিকেলে ওই বিবৃতিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেয় বিএনপি।
মঞ্জুর অভিযোগ ছিল, তালুকদার আবদুল খালেক হলফনামায় নিজ পেশা ও ব্যবসার তথ্য গোপন করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তালুকদার খালেক সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, নওয়াপাড়া-ফকিরহাটের ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেডের পরিচালক। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। ইস্টার্ন পলিমারের ঋণ তথ্যও তাঁর হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
মঞ্জুর অভিযোগের পর সোমবার রাতেই আওয়ামী লীগের নেতারা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি জানান। সেখানে মঞ্জু হলফনামায় দেখানো দুই লাখ টাকা আয়ের হিসাবের সমালোচনা করে বলা হয়, এ আয় একজন রিকশাচালকের আয়ের চেয়েও কম। বিবৃতিতে বলা হয়, নজরুল ইসলাম মঞ্জু থাকেন একটি আলিশান ভাড়া বাড়িতে। যে বাড়ির মাসিক ভাড়া কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। তাহলে তিনি কি বাড়িওয়ালাকে জিম্মি করে অথবা বিনা অর্থে বসবাস করেন?
দলটির নেতারা আরও বলেন, একটি পরিবারে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, খাওয়াসহ মাসে কমপক্ষে খরচ ৩০ হাজার টাকা। হলফনামার তথ্য মেনে নিলে সাধারণ মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অর্থের উৎস কোথায়?
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি