২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০০

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে বিশ্বনেতারা

দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ ও জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকারপ্রধানরা। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে শেষ হয়েছে দুই দিনব্যাপী ২৫তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন। পরে ‘অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে’ শীর্ষক ৫৪ দফার একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

৫৩ জাতির এই সম্মেলনে যৌথ ইশতেহার সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়, যাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। কমনওয়েলথ নেতারা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের জবাবদিহি করানো এবং সেখানে সকল সহিংসতা বন্ধ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত সকল রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে ফেরত নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি সদস্য দেশগুলো তাদের মর্যাদা সহকারে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টিরও আহ্বান জানাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন। ইশতেহারে বলা হয়, দুস্থ মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়ার জন্য কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করছে। সরকার প্রধানরা বর্তমান সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তারা অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির কথা উল্লেখ করে কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসন শুরু করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তারা মিয়ানমার সমাজে রোহিঙ্গাদের সমমর্যাদা দেয়ারও দাবি তোলেন। সরকার প্রধানরা সকল ধরনের চরমপন্থার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্ম পরিকল্পনার প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রকাশ করেন।

সম্মেলন থেকে কমনওয়েলথ নাগরিকদের জন্য আরও সমৃদ্ধ, ন্যায়তর, অধিকতর নিরাপদ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারসংবলিত একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বাগতিক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, ‘কমনওয়েলথ দেশগুলোতে সবার রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় কমনওয়েলথের নেতারা অঙ্গীকার করেছেন।’ তিনি বলেন, আগামী দুই বছর সংস্থার চেয়ার হিসেবে তার সরকার সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে। সমুদ্রের দূষণ মোকাবিলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি দেশ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান থেরেসা মে।

এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা আলাদা আলোচনা করেছেন। এসব আলোচনায় মূলত বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি স্থান পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, কমনওয়েলথে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই তরুণ এবং তাদের কর্মসংস্থান এবং দেশগুলোর সমৃদ্ধির জন্যই বাণিজ্য বাড়াতে হবে। সম্মেলনে সংস্থার নেতৃত্বে রানীর উত্তরাধিকারী হিসেবে যুবরাজ চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সরকারপ্রধানেরা সম্মত হন।

প্রকাশ :এপ্রিল ২১, ২০১৮ ১১:০২ পূর্বাহ্ণ