রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :
অপহরণের ৩২ দিন পর শর্তসাপেক্ষে ছাড়া পেলেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমা। মুক্তিপণ হিসেবে দিতে হয়েছে ১০ লাখ টাকা। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যদিও এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট করে মুখ খুলতে পারছেন না, জিম্মিদশা থেকে ফিরে আসা দুই নেত্রী ও তাদের স্বজনরা।
শুক্রবার নিজ বাড়ি ফিরেছেন দুই নেত্রী। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর তেতুলতলার এপিবিএন স্কুলগেট এলাকায় মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমা ছেড়ে দিয়ে গেছে অপহরণকারীরা।
মন্টি চাকমার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরের বগাছড়ি এবং দয়াসোনা চাকমার বাড়ি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের পানছড়ি এলাকায়। বর্তমানে দুজনেই সুস্থ ও অক্ষত রয়েছেন বলে জানান তাদের স্বজনরা।
১৮ মার্চ রাঙ্গামাটি জেলা সদরের কুতুবছড়ি আবাসিক স্কুল এলাকার একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে মন্টি ও দয়াসোনাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
মন্টি চাকমা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং দয়াসোনা চাকমা জেলা কমিটির সভাপতি।
এ অপহরণের জন্য প্রতিপক্ষ ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ গ্রুপকে দায়ী করেছে মূল সংগঠন- যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তপনজ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি।
এ দুই নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তাদের মুক্তির ব্যাপারে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে অপহরণকারীদের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ১০ লাখ টাকার মুক্তিপণের বিষয়টি ঢলাওভাবে প্রচার করা হয়েছে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাসে।
এছাড়া দেয়া হয়েছে বেশকিছু শর্ত। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, ইউপডিএফ করা যাবে না, তাদের কোনো আন্দোলনে যুক্ত হতে পারবেন না, অপহরণের পর যা কিছু হয়েছে এবং মুক্তিপণের বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করা যাবে না।
এদিকে শুক্রবার গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করলে এসব বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি অপহরণের শিকার দুই নেত্রী ও তাদের পরিবারের স্বজনরা। তারা কেবল বলেছেন, তারা ভালোই ছিলেন, ভালো আছেন। উভয়ের স্বজনরা বলেন, অক্ষত ও সুস্থ অবস্থায় মেয়েরা ঘরে ফিরতে পেরেছে তাতেই তারা স্বস্তিতে। মন্টি চাকমার বড় ভাই এবং দয়াসোনা চাকমার বাবা বৃষধন চাকমা বলেন, মন্টি ও দয়াসোনা দুজনেই সুস্থ আছেন।
তবে মাইকেল চাকমাসহ ইউপিডিএফ নেতারা বলছেন, ব্যাপক আন্দোলন, প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে তাদের দুই নেত্রীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সন্ত্রাসীরা।
এ অপহরণ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিভিন্ন চাপে এক মাসের অধিক সময়ের পর শেষে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। দুজনেই সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি সত্যজিৎ বড়ুয়া দুই নারী নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, যোগাযোগ দুর্গমতার কারণে তাদের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে খবর নিয়ে জানতে পেরেছে দুই নারীই সুস্থ শরীরে রয়েছেন। ঘটনার পর ২০ মার্চ দয়াসোনা চাকমার বাবা বৃষধন চাকমা বাদী হয়ে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
মামলায় জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (এমএন লারমা গ্রুপ) নেতা ও নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা এবং ‘ইউপিএফি গণতান্ত্রিক’ গ্রুপের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাকে (বর্মা) মূল আসামি করে ১৯ জনের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ