২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১৫

মেয়র নির্বাচনে এমপিদের প্রচারনায় অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বললেন ইসি

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবির মুখে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় এমপিদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে আচরণ বিধি সংশোধনে জরুরি সভা করলেও কমিশনের দ্বিধাবিভক্তিতে উদ্যোগ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রচারণার এমপিদের অংশ নেয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আইন ও বিধি সংস্কার কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এই কমিটির প্রধান।

জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলীয় এমপিদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি তোলে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে কমিশন জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে কেবলমাত্র ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধি ২০১৬’- এর সংশোধনীটি এজেন্ডায় ছিল। বৈঠকের কার্যপত্রে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনাগুলোও উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কমিশন সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও বেশিরভাগ কমিশনারই এমপিদের নির্বাচনি প্রচারণায় সুযোগ দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তারা সংবিধানের (৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদ) সংশ্লিষ্ট বিধান তুলে ধরে সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে পড়েন না বলে জানান।

জানা গেছে, বেশিরভাগ কমিশনার এই যুক্তির পক্ষে মতামত দিলেও একজন সদস্য সরাসরি এর বিরোধিতা করেন। তিনি মতামত দেন যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আচরণ বিধি পরিবর্তন করে প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ দিলে বিতর্ক তৈরি হবে। কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিশন তড়িঘড়ি করে আচরণ বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আইন ও বিধি সংস্কার কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই কমিটিকে দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করে কমিশনে পেশ করার কথা বলা হয়। এ সময় আচরণ বিধিতে অন্য কোনও সমস্যা আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, এমপিদের নির্বাচনি প্রচারণায় সুযোগ দেয়ার বিষয়টি কমিশন ইতিবাচকভাবে দেখছে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন একটা বড় এলাকা। সেখানে সংসদ সদস্যরা সিটি এলাকায় বসবাস করে থাকেন। যাওয়া-আসা করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের তফসিল হলে পরে তাদের যাওয়া-আসাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আইনে বলা আছে শুধুমাত্র ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয়। সেদিক বিবেচনা করে আলোচনাটা হয়েছে। আচরণ বিধিতে দেখা গেছে, সংসদ সদস্যরা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আওতায় আছেন। তারা কোনও অফিস হোল্ড করেন না। কোনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। এই বিষয়টি বিবেচনা করেই সংবিধানের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে আলোচনা হয়েছে।
হেলালুদ্দীন বলেন, সংসদ সদস্যরা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিনা বা সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিনা এগুলো নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনাররা একটা কমিটি গঠন করেছেন। কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কারে যে কমিটি আছে, ওই কমিটি ইস্যুটি পর্যালোচনা করে একটা রিপোর্ট দেবেন। এরপরে বিষয়টি উনারা কমিশনে উত্থাপন করবেন। এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, কী কী সংশোধন আসতে পারে, সে ব্যাপারে কমিটি একটি প্রস্তাব দেবে। এজন্য কমিটিকে কোনও সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভা করেছে, বিএনপিও কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল, এগুলো নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা, বা কমিশন সভা করবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এটা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়তো হতে পারে। আজকের (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
তফসিল ঘোষণার পর এই উদ্যোগ কেন? এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আচরণ বিধি মাঝে-মধ্যে আপডেট করা লাগে। আগে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতো না, এখন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। তখন এক ধরনের প্রেক্ষাপট, এখন আরেক ধরনের প্রেক্ষাপট। স্বাভাবিকভাবে এমপিরা এলাকায় যেতে পারেন না। এটা আপডেট করার জন্য আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের চাপে পড়ে এই উদ্যোগ কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, চাপে না। যেকোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের স্টেক হোল্ডার। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি। আবেদন-নিবেদন করলে ইসি বিষয়গুলো বিবেচনা করে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ দেয়া হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান ইসি সচিব।
ইসি সচিব আরও বলেন, এ প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে ইমপ্লিমেন্ট হতেও পারে, নাও হতে পারে।
গাজীপুরের এসপিকে বদলির বিষয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ ঢালাও। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়া হলে একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার সিপ্রন্ত নেয়া যায় না।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

প্রকাশ :এপ্রিল ১৯, ২০১৮ ১০:২৯ অপরাহ্ণ