স্পোর্টস ডেস্ক:
প্রস্তুতি ম্যাচের কোনো গুরুত্ব নেই। রেকর্ডের পাতায়ও লেখা থাকবে না এই ম্যাচ। কারও ব্যাক্তিগত সাফল্যও তার ক্যারিয়ারে লিপিবদ্ধ হবে না। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয় কেবল মূল লড়াইয়ের প্রস্তুতিটা কেমন হলো সেটা পরখ করে দেখার জন্যই। স্কুল-কলেজের পরীক্ষার্থীরা মূল পরীক্ষার আগে যেভাবে মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে থাকে, প্রস্তুতি ম্যাচ ঠিক তেমনই।
কাগজে-কলমে হয়তো কোনো গুরুত্ব নেই; কিন্তু বাস্তবিকই গুরুত্বহীন ম্যাচ এগুলো? একটা দল আসল লড়াইয়ের জন্য কতটা প্রস্তুত সেটা দেখার জন্যই তো এই ম্যাচগুলোর আয়োজন করা হয়। সেখানে বাজে খেলার অর্থ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া। এখানে ভালো করতে পারলে, এখান থেকে সঞ্চিত আত্মবিশ্বাস নিয়ে মূল আসরে ভালো করার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া যায়। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রস্তুতি ম্যাচের আত্মবিশ্বাস নিয়েই তো বাজিমাত করে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তরুণ সাকিব আল হাসান নিজেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তখনই প্রথম চিনিয়েছিলেন ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল ভারতকে। খেলেছিল বিশ্বকাপের সুপার এইট। সেখানেও হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে।
এবার তো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিটা সেরেছে সাসেক্সে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পর আয়ারল্যান্ডে ত্রি-দেশীয় সিরিজ খেলে। এরপরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে খেলতে হচ্ছে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। তাও টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র একদিন আগে খেলতে হচ্ছে ভারতের মত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে। উদ্বোধনী দিনে যেখানে বাংলাদেশকে মাঠে নামতে হবে, সেখানে কেন তড়িগড়ি এই ম্যাচ খেলা। সূচির দোহাই অনেকে দেবেন হয়তো; কিন্তু কেউ কী উত্তর দিতে পারবেন, এই আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ কেন খেলছে না ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা? তারা তো দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলে ফেলেছে।
সে যাই হোক, প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিলো ৩৪১ রান। অন্য ব্যাটসম্যানরাও রয়েছে দারুণ ফর্মে। শ্রীলংকা সিরিজ থেকে শুরু করে ত্রিদেশীয় সিরিজ- সব জায়গাতেই দারুণ ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সে জায়গায় হয়তো তামিমকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। তাই বলে এই এক ব্যাটসম্যানের অভাবে এতটা ভেঙে পড়বে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ! তাও ভারতের বোলিংয়ের বিপক্ষে। মেনে নেয়া গেলো, ভারতের বোলিং এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবুও এতটা ভেঙে পড়তে হবে?
এরমধ্যে তো উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার প্রবণতাও পরিলক্ষিত হলো। সৌম্য সরকার ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। সাব্বির কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোল্ড। উমেষ যাদবের স্লোয়ারে ইনসুইংও হলো। তাতেই কুপোকাত সাব্বির। সাকিব আল হাসান তো পুরোপুরি হতাশা উপহার দিলেন। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচটা উপহার দিলেন যেন তিনি। ইমরুল কায়েস নিজেকে প্রমাণ করার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু আবারও ব্যর্থতা উপহার দিলেন। ভুবনেশ্বর কুমারের বল পুল করতে গেলেন। মিসটাইম হলো। ব্যাটে-বলে হলো না। বল চলে গেলো উমেষ যাদবের হাতে।
মাহমুদউল্লাহ ভুবনেশ্বর কুমারের বলে ক্যাটের কানা ছোঁয়ালেন শুধু। ক্যাচটাও দিনেশ কার্তিক নিলেন ক্ষিপ্র গতিতে। মোসাদ্দেক এসেই উমেষ যাদবের বলকে বাছ-বিচার না করে ব্যাট চালাতে গেলেন। কানায় লাড়িয়ে বলটিকে জমা দিলেন উইকেটরক্ষকের হাতে। ২২ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মুশফিক আর মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে ২৫ রানের জুটি গড়ে চেষ্টা করেছিলেন বিপর্যয় সামাল দিতে; কিন্তু মোহাম্মদ শামির বলে কোমরের ওপর উঠে আসা বলটিকে সজোরে খেলতে হেলেন। ঠিকভাবে ব্যাটে লাগাতে পারলেন না মুশফিক। বল চলে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে। ৪৭ রানে পড়লো সপ্তম উইকেট।
সানজামুলকে নিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেন আরেকটা জুটি উপহার দিতে। গড়েন ৩০ রানের জুটি; কিন্তু জসপ্রিত বুমরাহের অফ স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলটিকে খোঁচা দিতে গেলেন মিরাজ। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বল চলে গেলো উইকেটরক্ষকের হাতে। ৭৭ রানে বিদায় নিলো অষ্টম ব্যাটসম্যান মিরাজ। ৩৪ বলে খেললেন ২৪ রানের ইনিংস। ভারতীয় পেসারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল লড়াইয়ে পেস আক্রমণের বিপক্ষে কী করবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা? অথচ এই উইকেটেই বাংলাদেশের পেসারদের মোকাবেলা করে ভারত তুলেছে ৩২৪ রান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ