আতিকুর রহমান , গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আচরনবিধি ভঙ্গের মহোৎসবে রিটার্নিং কর্মকর্তাও নীরব, চুপচাপ।
১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার। দুপুর সোয়া একটার দিকে কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থকসহ সর্বোচ্চ পাঁচজনের যাওয়ার বিধান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী গাড়ি ভাড়া করে তার কর্মী ও সমর্থকদের হাজির করেন জেলা শহরের রথখোলাস্থ বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে। এসময় তাদের প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ও বড় একটি নৌকা নিয়ে মিছিল, শোডাউন করতে দেখা যায়। অথচ প্রতীক বরাদ্দের আগে কোন মিছিল, মিটিং, কোথাও পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
দুপুর না গড়াতেই এসব কারণে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক রাজবাড়ি রোডসহ প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে নারী ও শিশুসহ জনসাধারণ ভোগান্তির মুখে পড়েন। অসুস্থ লোকজন পায়ে হেঁটে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করেন। এসব প্রতিরোধে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন থাকলেও তাদের অনেকটাই বেকার দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র জমা দিতে দলবল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মনোনয়ন বঞ্চিত আজমত উল্লাহ খান, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সফিকুল আলম, সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুর রউফ নয়ন, সদস্য আব্দুল হাদী শামীম, জেলা আওয়াওমী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, সহ-সভাপতি আমানত হোসেন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অধ্যক্ষ মোঃ মহিউদ্দিন মহি, কাজী ইলিয়াস, যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সদস্য রেজাউল করিম রাসেল, রিয়াজ মোহাম্মদ আয়নাল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেল সরকার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ খালিদ হোসেনসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী তার সঙ্গে যান। এ ছাড়া কার্যালয়ের বাইরে কয়েক শ কর্মী বড় একটি নৌকা নিয়ে মিছিল করছিলেন।
তবে আচরনবিধি লঙ্ঘিত হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাও যেন প্রার্থীদের খুশির মুহূর্ত্ব ভাগ করে নেন। মনোনয়নপত্র গ্রহণ শেষে জাহাঙ্গীর ও তার সঙ্গীদের নির্বাচনী আচরণ বিধির কপি ধরিয়ে দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, আচরনবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সে জন্য আমি ডিসি ও এসপি সাহেব এবং ক্যান্ডিডেটদের সঙ্গে কথা বলেছি। মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনের বেশি লোক না আসতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ‘কিন্তু পুলিশ বলে জোর করে তারা ভেতরে ঢুকে গেছে’। হয়তো কৌতূহলবশত অনেকে এসেছে। তারপরও পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটদের বলে দিয়েছি কোথাও যাতে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন।
তিনি আরও বলেন, আচরণ বিধি যাতে লঙ্ঘন না হয় এ জন্য আমরা বিভিন্ন ধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আচরণ বিধি বিলি করছি, মাইকে ঘোষণা দিচ্ছি, প্রশাসনও চেষ্টা করছে। আমাদের প্রচেষ্টা কিন্তু অব্যাহত আছে। কিছু অতি উৎসাহী মানুষ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা করে। আইনবিধি অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি বলব না যে আমরা ১০০ ভাগ সার্থক। সবাই সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কমিশন একা কিছু করতে পারবে না।
মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ে সভা করে নেতা-কর্মীদের আচরণবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারপরও অনেকে তা না মেনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে পড়েছে।
বিএনপির দলীয় প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থী যেভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে এ নির্বাচন জনগণকে হতাশ করবে। নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবনার বিষয়। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে’।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ তারিফুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির মোঃ হাসান উদ্দিন সরকারসহ নয়জন মেয়র প্রার্থী তাদের মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর আগে বিভিন্ন রাজনীতিক দল ও স্বতন্ত্র ১৮মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শেষ হল মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়। বাছাই হবে ১৫-১৬ এপ্রিল। প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৪ এপ্রিল। ভোট গ্রহণ আগামী ১৫ মে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ