আজ পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। আজ থেকে গণনা শুরু হবে ১৪২৫ বঙ্গাব্দের। গতকাল সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়েছে ১৪২৪ সালের। কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। বহু আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার স্মৃতি হয়ে রইল গেল বছরটি। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বছরটি থাকল স্মৃতিময়। হিসাব কষতে গেলে দেখা যাবে, বছরটিতে আমাদের অর্জন সামান্যই। রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন জনমনে সৃষ্টি করেছে অস্বস্তি, তেমনি সামাজিক অবক্ষয়ের ধারা অধিকতর বেগবান হয়ে ওঠায় শঙ্কিত সচেতন মানুষেরা। সমাজের সর্বত্র এক ধরনের অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা যেনো ঘিরে ধরেছে আমাদের। এ সর্বনাশা ব্যাধি থেকে জাতির মুক্তির জন্য সব মহলকেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে-এমনটি মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।
বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আবহমান কাল ধরে এতদ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বাংলা নববর্ষকে নিজেদের সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য হিসেবে পালন করে আসছে। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে ‘শস্যকর’ আদায়ের হিসাব রাখার জন্য বাংলাসনের প্রবর্তন। শাহ ফতেউল্লাহ সিরাজী ছিলেন এই সনের উদ্ভাবক। সেই শস্যকর আদায়ের বর্ষপঞ্জী বাংলা সন এখন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অন্যতম অংশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পহেলা বৈশাখে হালখাতার মহরত করে নতুনভাবে ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু করেন।
বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের দেশের সার্বজনীন উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে এখনো অবধি এ দিনটি এদেশের মানুষের জন্য নিয়ে আসে আনন্দবার্তা। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরে বসে বৈশাখী মেলা। প্রাণের আনন্দে উদ্বেলিত নারী-পুরুষ শিশু-কিশোররা সেসব মেলায় অংশ নেয়। পুরনো বছরের দুঃখ-কষ্ট, বেদনা-ক্লেশকে ঝেড়ে ফেলে আনন্দে উদ্বেলিত হন তারা। নতুন বছরটি তাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসবে কোনো শুভ বার্তা-এ প্রত্যাশায় তারা গেয়ে ওঠেন-‘ এসো হে বৈশাখ এসো এসো ……….।‘
রাজধানীতে বাংলা নববর্ষ বরণের প্রধান অনুষঙ্গ রমনা বটমূলের ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেখানে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। বছরের প্রথম সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুরের মুর্ছনায় মুখরিত হয়ে উঠবে রমনার সবুজ চত্বর। অন্যদিকে শিশু একাডেমি চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে বৈশাখী মেলার। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বৈশাখী মেলা, সঙ্গীতানুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। চারুকলা ইনস্টিটিটের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবারও থাকছে। সব মিলিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আমরা আশায় বুক বেধে আছি। সমস্ত বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানি তিরোহিত হয়ে এদেশ একদিন হয়তো সত্যিকার অর্থেই ছায়া সুনিবিড় শক্তির নীড়ে’ পরিণত হবে। নতুন বছরটি শুভ হোক, সবার জীবনকে ভরিয়ে তুলুক হাসি-আনন্দে, সবার জীবন থেকে সরে যাক দুঃখ, ক্লেশ গ্লানির কালো মেঘ, সাফল্যের নবসূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হোক চারিদিক। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।