২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:৪৩

আ’লীগের সন্ত্রাসীরা দুই সিটিতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে : রিজভী

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আসন্ন দুই সিটিতে মেয়র নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা এখনো নেয়নি প্রশাসন।
নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরীর আহ্বান করে রিজভী বলেন, দুই সিটিতে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল করছে, মিটিং করছে, সমাবেশ করছে বীরদর্পে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সভা-সমাবেশ দুরের কথা বাড়িতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের জীবন কাটছে হয় জেলখানায় না হয় আদালতের বারান্দায় বারান্দায় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আজ রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব মন্তব্য করেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রিজভী বলেন, ‘গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না’ গত দুদিন ধরে এ ঘোষণা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনার। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারে জনগণের আগ্রহ না থাকলেও নির্বাচন কমিশন অনেক কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহারেরও ঘোষণা দিয়েছে।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন আদৌ দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু চায় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার বক্তব্যে সরকারি ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না করে, সরকারি ফর্মূলায় নির্বাচন করতেই ইসি আগাম মন্তব্য দিলেন কি না সে প্রশ্নটি এখন ক্রমাগত সম্প্রাসারিত হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
‘সব দল না এলে নির্বাচন ভাল হয় না’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্য উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিইসির প্রধান দায়িত্ব যে কোন নির্বাচনে সব দলকে আনার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটা তারই প্রধান দায়িত্ব- এ ক্ষেত্রে যদি সরকার বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সংবিধানের অর্পিত ক্ষমতায় তিনি সকল বাধাকে অতিক্রম করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন। সরকার যদি সিইসির প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মতো আচরণ করতে চায় তাহলে তিনি নিজ নীতিতে অঁল থেকে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে সাহসি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। প্রয়োজনে সরকারের অন্যায় চাপের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করবেন। তাতে দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায় আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনী সরকারের দলীয় বাহিনীর মতো কাজ করছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তাদের পক্ষে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভয়মুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভোটাররাও তাদের ওপর আস্থাশীল হতে পারবেন না। বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে হলে সেনা মোতায়েন অত্যাবশ্যক বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লেবেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ইভিএম ব্যবহার না করা, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী আহমেদ বলেন, বিগত দুই মাস ধরে কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জনতার ভালবাসায় সিক্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থের প্রকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা না দিয়ে সম্পূর্ণ প্রহসন করতে পিজি হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও তাঁকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ পাননি।
রিজভী আহমেদ বলেন, পিজি হাসপাতালে গাড়ি থেকে নামার পর জনতা দেখল সাহসী দৃঢ়চেতা আর আস্থায় অবিচল দেশনেত্রীকে। মানুষ উপলব্ধি করলো গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের সংগ্রামে আপোষহীন নেত্রীর অকুতভয় দুর্জয় সাহস। কারাগারের উদ্দেশ্যে গাড়িতে তোলার সময় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের বারান্দাগুলোতে রোগী, নার্স ও চিকিৎসকসহ উৎসুক হাজারো জনতা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী এই নেত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানালেন। কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও এতটুকু দমে যাননি বেগম খালেদা জিয়া। গতকালের হাসোজ্জ্যল অভিব্যক্তির সে বার্তারই জানান দিল।
বিএনপির এ নেতা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশী হিংসাত্মক আচরণ ও নির্বিচারে গ্রেফতারের আতঙ্কজনক পরিবেশেও আপোষহীন নেত্রী কেমন আছেন সেটুকু দেখার জন্য উদ্গ্রীব ছিল দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি দেখল- অসুস্থতা সত্ত্বেও দৃঢ়তর এক উন্নত মম শির। মুহুর্তে তাঁর অন্তর্বার্তা পৌঁছে গেছে কোটি কোটি জনগণের হৃদয়ে- তিনি যেন বলে গেলেন “আপনারা প্রস্তুত হোন গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে তীব্র আন্দোলনে। দুর্নীতিপরায়ণ কলুষ থেকে মুক্ত করুন দেশমাতৃকাকে। হিংসার কারণে কারাদন্ড দিয়ে শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল আমি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে টলে পড়বো বা রোগে শোকে কাতর হয়ে যাবো। কিন্তু সরকারের সে আশা কখনই সফল হবে না”।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের প্রতি নারায়নগঞ্জ কারাগারে চালানো হচ্ছে অমানবিক আচরণ। তাকে একটি ছোট অন্ধকার কক্ষে রাখা হয়েছে। বন্দী মানুষ হিসেবে যতটুকু অধিকার পাওয়া দরকার সেটিও দেয়া হচ্ছে না। কারাগারে নানাভাবে তাকে হয়রানী ও হেনস্থা করা হচ্ছে। শিমুল বিশ্বাসের প্রতি সরকারের এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএম হাসপাতালে আনা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনী সেখান থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। আমি দলের পক্ষ থেকে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ৮, ২০১৮ ১:৩০ অপরাহ্ণ