বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছিল ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চেকপোস্টে হামলার অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে থেকে। আর তারও আগে শুরু হয়েছিল গ্রামে গ্রামে সেনা প্রচারণা। অ্যামনেস্টির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা তদন্তে নিয়োজিত সংস্থাটির মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্বেষী প্রচারণায় ফেসবুক ভয়াবহ ভূমিকা রেখেছে। মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেছেন, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সংকটে গণহত্যার আভাস পাওয়া গেছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা নিধনে সামাজিক মাধ্যম ‘নির্ধারণী ভূমিকা’ পালন করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের মধ্যে বিরোধ, অশান্তি ও দ্বন্দ্বের মাত্রা বাড়িয়েছে বিপুল পরিমাণে। নিশ্চিতভাবেই বিদ্বেষী প্রচারণা সেই দ্বন্দ্ব-বিরোধ-অশান্তির একটা অংশ।’
জাকারবার্গ ভক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি মিয়ানমার ইস্যুটিকে আমার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্ব পেয়েছে।’ ফেসবুককে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণার অস্ত্র করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, … সেগুলো বাস্তব ঘটনা আর আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে তা বিচার করেছি। সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ একটি ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। জানান, ফেসবুকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণেই দেখা গেছে, ওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ‘চটকদার বার্তা’ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। তার মতে, এর মূল লক্ষ্য ছিল দুইপক্ষের মধ্যে সহিসংতা উস্কে দেওয়া। জাকারবার্গ স্বীকার করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার, পৃথিবীকে বাস্তবিক হুমকির মুখে ঠেলে দিতে ফেসবুককে ব্যবহার করছে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিয়ানমার থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বিদ্বেষমূলক প্রচারণা, খণ্ডিত কিংবা আংশিক বক্তব্য বিপুল পরিমাণ সতর্কতা ও মনোযোগ দাবি করে। জানিয়েছেন, মিথ্যা প্রচারণা আর খণ্ডিত বক্তব্য ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত ফেসবুকের টুলসগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করছে তার প্রতিষ্ঠান। চেষ্টা করছে সংকট নিরসনের।
ভক্স নিউজের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক কিছু পোস্ট নামিয়ে নিয়েছে। হিংসাত্মক উপাদান ছড়ানোর অভিযোগে ভয়াবহ বিতর্কিত একজন কট্টর বৌদ্ধভিক্ষুর অ্যাকাউন্ট সাময়িক বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানা গেছে। তবে ফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত সহিংসতার প্রমাণসহ অনেক পোস্ট মুছে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ভক্স নিউজ এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক নেটওয়ার্ক নজরদারির চেষ্টা কতটা চ্যালেঞ্জ ও জটিল তা জাকারবার্গের সামনে হাজির করার চেষ্টা করে। জাকারবার্গ সাক্ষাৎকারে তাদের বলেন, অন্যান্য জটিল সমস্যা থাকার পরও ফেসবুক প্রতিনিয়ত দুটি বিষয়কে আলাদা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে: কোনটা ঘৃণা ছড়ানো আর কোনটা বৈধ রাজনৈতিক বক্তব্য। পরিপূর্ণ সফলতার দাবি না করলেও জাকারবার্গ ভক্সকে বলেছেন, ‘সমাজের ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যকার বিতর্কের মতো যে বিষয়গুলোতে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত নিতে হয় (আগে থেকেই বুঝতে হয় যে বার্তাটি ঘৃণার, উসকানি সৃষ্টি করতে পারে কিনা), সেগুলোর ক্ষেত্রে অন্য অনেক কোম্পানির তুলনায় ফেসবুকের অবস্থান শ্রেয়তর’।
সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়, মিয়ানমারে ২০১৪ সালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটিতে। দেশটির সামরিক জান্তা স্মার্টফোনের দাম কমানোর জন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার পর সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ে দেশটিতে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মিয়ানমার তদন্তকারী ইয়াংহি লি জানান, মিয়ানমারে ফেসবুক সরকারি, বেসামরিক ও ব্যক্তিগত জীবনের বিশাল অংশ। সরকার জনগণের মধ্যে তথ্য প্রচার করার জন্য এটা ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে যা কিছু করা হয়, তার সবই হয় ফেসবুকে।’ তার মন্তব্য, ফেসবুক দরিদ্র দেশটিকে সাহায্যও করেছে আবার বিদ্বেষী প্রচারণা ছড়াতেও ব্যবহার করা হয়েছে। ভক্সের পক্ষে কেলিইন সোমবারের সাক্ষাৎকারে বলেন, ফেসবুক যখন মিয়ানমারে তথ্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, অন্য কেউ সেখানে এতবড় বাজার ধরতে পারেনি। এই অঞ্চলে সংবাদ উৎস হিসেবে ফেসবুকের জনপ্রিয়তাই মিয়ানমারে ভুয়া খবরের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। জাকারবার্গ স্বীকার করেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ফেসবুককে আরও বিকশিত হতে হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ