২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৩৪

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বড় ঘাটতি দৃশ্যমান হচ্ছে। গত জুলাই থেকে ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৫১২ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছর প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৯ শতাংশ। সেই বিবেচনায় এবার রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে কম।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ে অর্থমন্ত্রণালয় অতি উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তারা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও শুরুতে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক ধরণের বাহাবা নেওয়া হয়। আর বছরের শেষ দিকে এসে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনতে হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির স্বাভাবিল লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। অর্থনীতিতে এমন আহামরি গতি আসেনি যে, ৩৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বাড়বে। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রণালয়কে বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত তিন বছরও রাজস্ব আদায়ে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও শেষদিকে এসে তা কমিয়ে আনতে হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সম্পদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় এবারের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হতে পারে।
অবশ্য এর মধ্যেই গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের চিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত অর্থবছর রাজস্বের কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে এনবিআর দেখিয়েছে, ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। তবে সম্প্রতি সরকারি হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয়ের রাজস্ব প্রাপ্তি হিসাব  পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজস্ব আদায়ে ব্যবধান প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর গত অর্থবছরে এ পরিমাণ অর্থ বেশি দেখিয়ে থাকে, তাহলে তা সমন্বয়ের পর এনবিআরের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যামাত্রা বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়ায়! সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও বলেছেন, চলতি অর্থবছর এনবিআরকে ৪৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। অথচ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনবিআরের আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। সেই বিবেচনায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের চিত্রে বড় ধরণের হেরফের নেই বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি চিত্র অপেক্ষাকৃত হতাশাজনক। আলোচ্য সময়ে আয়কর আদায় বেড়েছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ ও ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চিত্র কী হয়, তা নিয়েও জোর আলোচনা রয়েছে এনবিআরে। আগামী ৭ জুন অর্থমন্ত্রী পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিশাল বাজেটের বিষয়ে প্রাথমিক ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। ফলে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রাও বড় হতে যাচ্ছে বলেই আভাস পাওয়া গেছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ
প্রকাশ :এপ্রিল ৩, ২০১৮ ১:০১ অপরাহ্ণ