আজ শোকাবহ ৩০মে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এদিনে স্বাধীনতার ঘোষক স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনা-সদস্যের হাতে শহীদ হন। সে থেকে এ দিনটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেদনা বিধুর দিন হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। এবারের ৩০ মে পালিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী হিসেবে। দিনটি উপলক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নিয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি নাম। আপন মহিমায় উজ্জ্বল সে নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও স্বনির্ভরতা অর্জনের আন্দোলনের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে এদেশ ও জাতির ঘোরতর দুর্দিনে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন ত্রানকর্তারূপে। পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দান তাঁকে এদেশের ইতিহাসের অংশে পরিণত করে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আরেক সঙ্কটময় দিনে তিনি আবির্ভূত হন দেশ ও জাতিকে রক্ষার সিপাহসালার হিসেবে। সেদিন থেকেই শুরু হয় তাঁর জাতীয় রাজনীতিতে পদাচারণা। রাষ্ট্রক্ষমতার সংস্পর্শে এসে তিনি উপলব্ধি করলেন, পুরনো ধাঁচের রাজনীতি এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে পারবে না। তাই তিনি নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করলেন। তাঁর সে রাজনীতির মূলমন্ত্র ছিল উন্নয়ন ও উৎপাদন।
বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রণীত ১৯ দফা কর্মসূচী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ম্যাগনাকার্টাা হিসেবে স্বীকৃত। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কর্মতৎপর করে তুলতে তিনি গ্রহণ করেছিলেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নিরক্ষরতা দূর করে জাতিকে সুশিক্ষিত করে তোলা, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতার মাধ্যমে জনসংখ্যার অর্ধাংশকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। প্রকৃত পক্ষে একটি জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন দরকার, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার স্বল্পকালীন রাজনৈতিক জীবনে তার প্রায় সবগুলোই গ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে তার প্রণীত কর্মসূচীর বাইরে আজও যেতে পারেনি।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রবাদ পুরুষ। একদলীয় শাসনের নিগড় থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে আত্মপরিচয় সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের যে আলাদা জাতিসত্ত্বা রয়েছে, সে সত্য তিনি উদঘাটন করেছিলেন তাঁর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তত্ত্বের মাধ্যমে। স্বাধীনতা ঘোষণা, বহুদলীয় গণতন্ত্র, আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এ তিনটি কাজ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ইতিহাসে দিয়েছে অনন্য স্থান।
তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী ও উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত আধিপত্যবাদী শক্তির চক্রান্তে তিনি নিহত হন। মূলত প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে অপশক্তিগুলো বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যার ধারাবাহিকতা আজো চলছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে ঘাতকরা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলেও এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে এদেশের ইতিহাস থেকে তাঁকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। একটি মহল তাঁর ভাবমূর্তি বিনষ্টের প্রাণান্ত অপপ্রয়াস চালিয়েও সফল হতে পারে নি। কেননা, জিয়াউর রহমানকে এদেশের জনগণ তাদের কাছের মানুষ বলে জানে, যিনি তাদেরকে দেখিয়েছেন মুক্তির পথ।
আজকের এ দিনে আমরা তাঁর ম্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করি। তিনি বেঁচে আছেন, এদেশের মানুষের অন্তরের গভীরে, বেঁচে থাকবেন চিরকাল। এ পৃথিবী যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে, জিয়াউর রহমান নামটি ধ্রুবতারার মতোই জ্বল-জ্বল করবে আপন মহিমায়।