মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিনিধি :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে চিরতরে উৎখাত করে দিতে সুযোগের অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ।
ফখরুল বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করছে, কখন একটা সুযোগ আসবে, এ সরকারকে চিরতরে উৎখাত করবে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। বিকেল ৩টা থেকে এ সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিষ্টার জমিরুদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, ফজলুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি সাজানো মিথ্যে দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা’ আজকে কারাবন্দি। যিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর লড়াই করেছেন, সেই মাকে তারা বন্দি করে রেখেছে। আপনারা সবাই ফেটে পড়ুন, উঠে দাঁড়ান, সবাই জাগ্রত হন, সোচ্চার হোন, এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সবাই রাজপথে বেরিয়ে আসুন। সময় আর নেই, অন্য কোনো বিকল্প নেই, আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন।
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের আর কোনো এজেন্ডা নেই। এখন আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনকে বেগবান করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করবো। এ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এদের(বর্তমান সরকার) পতন ঘটাবো। বাধ্য করবো দেশনেত্রীসহ সব রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়ার জন্য। আন্দোলন করতে হবে এবং সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভয়াবহ যে দানব আমাদের বুকের ওপর বসে আছে, তাকে সরানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা দরকার। সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন সবাইকে নির্বিশেষে ভয়ঙ্কর এ স্বৈরাচার সরকার, যা আজকে বিশ্ব স্বীকৃত, তাকে হটাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
দেশের অর্থনীতির দুর অবস্থার উল্লেখ করে সরকারের প্রতি অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ দেশের অর্থনীতি ধংস করে দিয়েছে এই সরকার। ব্যাংকগুলো লুট করে নিয়েছে। কয়েকদিন আগে (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) এফবিআই বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে যে হ্যাকিং (রিজার্ভ চুরি) হয়েছিল, তার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকেরাই জড়িত আছে।
তিনি বলেন, আজকে প্রত্যেকটি প্রজেক্টকে তারা মেগা প্রজেক্ট বলছে। এর উদ্দেশ্য মেগা চুরি, মেগা লুট। ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর ওয়াদা করেছিল এই সরকার। এখন ৭০ টাকায়ও চাল পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস, তেলসহ জ্বালানি কাজে ব্যবহৃত প্রত্যেকটা জিনিসের দাম তিন-চার-পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। আজকে যারা দেশ চালাচ্ছেন, তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নন। সরকার যদি জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসে তাকে কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না। সে কারণেই স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এসে আমাদের গায়ে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তকমা লেগেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার; দেশ ও দেশের মানুষের জন্য লজ্জার।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ অবস্থা আর চলতে পারে না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলনে মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি আদায় করে আমরা নির্বাচনে যাব। যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের সামনে এখন তিনটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তবে এই মুক্তির জন্য আইনি লড়াই যথেষ্ট নয়। এ জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যেখানে সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। তৃতীয়ত, আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশের মানুষের প্রতিধিত্ব করতে চাই। সে জন্য সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকার সমঝোতায় না আসলে রাজপথ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে বলে সতর্ক করেন ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ