বিনোদন ডেস্ক:
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ দাবি করেছে চলচ্চিত্রকর্মীদের সমন্বিত সংগঠন ‘চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি’। বুধবার (২৮ মার্চ) এফডিসিতে এক একান্ত বৈঠক শেষ এ কথা জানালেন কমিটির সভাপতি অভিনেতা ফারুক।
বৈঠকে আগামী ৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ ও চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেখানেই ক্ষুব্ধ নেতারা তথ্যমন্ত্রীকে এই মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণের দাবি তুলেন।
সংগঠনের সভাপতি ফারুক বলেন, ‘এর আগে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে নায়করাজ রাজ্জাক ভাইকে সভাপতি করা হতো। এবার তিনি নেই। তাই সর্বসম্মতিক্রমে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পুরুষ সৈয়দ হাসান ইমাম সাহেবকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি মিটিং হয়েছে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) বিএফডিসির এমডি আমীর হোসেন মোবাইলে কল দিয়ে সৈয়দ হাসান ইমামকে এই পদে না থাকার জন্য ওপর মহলের আদেশ আছে বলে জানান। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৈয়দ হাসান ইমাম আমাদের মুরুব্বী। চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতিত্বে তাকেই মানায়। তাই তাকে সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা মানে আমাদের চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষকেই অপমানের চেষ্টা। বিএফডিসির এমডির ওপর মহলটা কে? অবশ্যই তথ্যমন্ত্রী। যে মন্ত্রী সমগ্র চলচ্চিত্রের মানুষকে অপমান করেন তাকে আমরা আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে। শিগগিরই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত দাবি নিয়ে যাবো।’
অভিনেতা ফারুক বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের কোনো জাতীয় দিবসে ভিনদেশি কোনো সিনেমা চলতে দেয়া হবে না। যদি চলে তবে আমরা শিল্পীরা ও চলচ্চিত্রের মানুষেরা রাজপথে নামবো। এটা আমাদের জাতিসত্তাকে খাটো করে। একটা মহল ইচ্ছে করেই বারবার আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রিকে দমিয়ে রাখতে এই চেষ্টা চালায়।’
তিনি তথ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মন্ত্রী চলচ্চিত্রের বড় সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছেন না। তিনি সিনেমা রিলিজের তারিখ ঠিক করে দেয়ার মতো ছোটখাটো বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন। এসবকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতির চর্চা ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয়েছে। কথা ছিল সরকারিভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি হলো ডিজিটাল করা হবে। সেখানে ডিজিটাল মেশিন বসবে। মন্ত্রী নিজেই এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় এক বছর পার হতে চললেও এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েই সময় পার করেছেন। অনেক সময় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখার চেষ্টাও করেন না। অভিযোগ আছে একটি বিশেষ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ পন্থায় বারবার সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাই এই মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই আমরা।’
চলচ্চিত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটির আজকের বৈঠকে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা ছাড়াও সরকারি আয়োজনের বাইরে আলাদাভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতিত্বে সৈয়দ হাসান ইমামকে বহাল রাখা না হলে এই সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন আসবে না। এই বিষয়ে আজ বিএফডিসির এমডি আমীর হোসেনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানালেন ফারুক।
তবে এই বিষয়ে বিএফডিসির এমডি আমীর হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, আজ বুধবারের কার্যদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি বিএফডিসির এমডি আমীর হোসেন। বৃহস্পতিবার এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আজকের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আলমগীর, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রশিদ চৌধুরী, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাইমন সাদিক, নৃত্যশিল্পী সমিতির সভাপতি মাসুম বাবুল, নির্মাতা এস এ হক অলীক ও আরও অনেকে। সভা সঞ্চালনা করেন নির্মাতা মোহাম্মদ হোসেন জেমী।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর